বার্মার সাথে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশের বাধা কোথায়

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য বহু বছর ধরে কূটনীতিক ভাবে বাংলাদেশ চেষ্টা করলেও পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে বরং আরো অবনতি হয়েছে। কূটনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যমান কোন ফলাফল দেখা যাচ্ছে না।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নানামুখী তৎপরতা চালাতে শুরু করেছে মুসলিম প্রধান দুই দেশ তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়া।কিন্তু এই সংকটের সবচেয়ে বড় ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে বাংলাদেশ কি যথেষ্ট করছে? অনেকে মনে করেন , রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে বাংলাদেশ যেসব ভূমিকা নিয়েছে সেটা যথেষ্ট নয়। কিন্তু এ ধারনার সাথে পুরোপুরি একমত নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক আমেনা মহসীন।

তিনি মনে করেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করেছে।

অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলেন, “এক্ষেত্রে খুব অফেনসিভ স্ট্র্যাটেজি নেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব কিনা সেটা চিন্তার ব্যাপার আছে।”রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কেন জোরালো এবং আক্রমনাত্নক অবস্থান নিতে পারছেনা?

আমেনা মহসিন মনে করেন, বাংলাদেশ চায় না মিয়ানমারের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন এবং আমেরিকার মতো দেশগুলো নীরবতা পালন করছে। সেজন্য বাংলাদেশ জানে যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় শক্তিগুলোর সমর্থন পাবে না।

মিয়ানমারে যেহেতু নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র , সেজন্য সেখানকার শাসক গোষ্ঠির কোন জবাবদিহিতা নেই। তারা এধরনের কাজ চালিয়ে যেতে পারে।

“কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের সামনে একটা নির্বাচন আছে। সেটাও বাংলাদেশকে ক্যালকুলেশনে রাখতে হবে। কারণ এটা নিয়ে অনেক ধরনের রাজনীতিও হতে পারে,” বলছিলেন অধ্যাপক আমেনা মহসিন।

তাছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কোন সামরিক উপায়ে হতে পারে না বলে তিনি মনে করেন। এ সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ তৈরির ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া বান্দরবান এবং কক্সবাজার ভৌগোলিকভাবে একটি স্পর্শকাতর এলাকা।

সেজন্য রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কূটনীতিক ভাবে করার চেষ্টা করছে। মিয়ানমার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেশটির বিরুদ্ধে যাতে কোন পদক্ষেপ নেয়া না হয়। সেজন্য চীন এবং রাশিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার।

চীন বাংলাদেশেরও বন্ধুপ্রতিম দেশ। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের নীতিকে বাংলাদেশ কতটা প্রভাবিত করতে পারবে? অধ্যাপক আমেনা মহসিন মনে করেন, চীন এমন একটি রাষ্ট্র যারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। মিয়ানমারের সাথে চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নীতির জন্য মিয়ানমারকে প্রয়োজন।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেবার বিষয়টিকে সমর্থন করবে না চীন, বলছিলেন আমেনা মহসিন। আমেনা মহসিন বলেন, “বাংলাদেশ এটা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অবশ্যই আনতে পারে। এবং আনা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।”

সূত্র: বিবিসি:

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন