বিমানবন্দরে জার্মান প্রেসিডেন্টকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করালেন কাতারের মন্ত্রী

fec-image

আকাশে ঝকমকে রোদ, পাতা আছে সম্মানের লাল গালিচাও। গার্ড অফ অনারের জন্যেও সবাই প্রস্তুত। কাতারে জার্মান রাষ্ট্রদূত লোথার ফ্রাইশলাডারও উপস্থিত ছিলেন দোহা বিমানবন্দরে৷ শুধু একটাই সমস্যা। জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন না কোনো কাতারি সরকারি কর্মকর্তা।

নির্ধারিত সময়ের অল্প সময় আগেই বুধবার দোহায় অবতরণ করে জার্মান সামরিক বাহিনী বুন্ডেসভেয়ারের এয়ারবাস এ৩৫০ বিমানটি। গনগনে রোদে প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর জার্মান রাষ্ট্রপ্রধানকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন কাতারের পররাষ্ট্র বিষয়ক রাষ্ট্র মন্ত্রী সুলতান আল-মুরাইচাই।

দেরি হওয়া সত্ত্বেও, স্টাইনমায়ার সঠিক সময়ে উড়াল দেন কাতারের ক্ষমতাসীন আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সাথে দেখা করার জন্য।

শুধুই কি ৩০ মিনিটের জটিলতা?

স্টাইনমায়ারের সাথে একই বিমানে ছিলেন ডয়চে ভেলের রোজালিয়া রোমানিচ। ৩০ মিনিটের এই জটিলতার ফলে তার মনে হচ্ছিল হয়তো কোথাও কোনো ভুল হয়েছে। হয়তো, স্টাইনমায়ারের তিনদিনব্যাপী ইসরায়েল সফরের ফলে কিছুটা শীতল আচরণ করছে কাতার।

চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের প্রেক্ষিতে কাতারের ভূমিকা জার্মানির দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশ জটিল, কারণ কাতারেই হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাস৷ ফলে, অনেকেই ধারণা করেন যে বুধবারের এই ঘটনা হয়তো জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রভাব।

অক্টোবরে আল থানির বার্লিন সফরের আগে জার্মান গণমাধ্য জেডডিএফকে বেয়ারবক বলেন, ‘‘সন্ত্রাসকে এভাবে সমর্থন করা আমরা মানি না৷ এই সন্ত্রাসবাদকে ঠেকাতে কাতারের মত রাষ্ট্রেরও একটা দায়িত্ব রয়েছে।”

বেয়ারবকের এমন মন্তব্যে কাতার কর্তৃপক্ষ ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে জানা গেছে৷ এছাড়া, দেশটি ইতিমধ্যে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল ও প্রশাসন কর্মীদের বেতন। কাতার বলছে, এমনটা তারা করেছে ইসরায়েলের অনুমোদন নিয়েই।

বন্দিদের তরফে সুখবরের আশায় স্টাইনমায়ার

কাতারি কর্তৃপক্ষের সাথে হামাসের হাতে বন্দি জার্মান নাগরিকদের ছাড়ানোর দিকটি আলোচনা করতেই কাতারে পৌঁছান জার্মান প্রেসিডেন্ট।

আল থানির সাথে আলোচনার পর সাংবাদিকদের স্টাইনমায়ার বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, জার্মান বন্দিদের হামাসের কবল থেকে বের করে আনতে কাতার তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। আমাদের বুঝতে হবে, এতটা কঠিন আলোচনার পরিস্থিতিতে আসলে কোনো নিশ্চয়তাই থাকে না৷ আমি আশা করছি, আসন্ন দিনগুলিতে যাতে আমরা কোনো সুখবর পাই।”

গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় কাতার

কাতার ইতিমধ্যেই দুইপক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ায় আসতে ‘‘হামাসের ওপর ও এই অঞ্চলে তার প্রভাব ব্যবহার করেছে”, বলে জানান স্টাইনমায়ার।

মোট ১৮০জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে ইসরায়েলের জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে৷ অন্যদিকে, হামাস ৮০ জন বন্দিকে মুক্ত করেছে, যার মধ্যে ৬০ জন ইসরায়েলি নাগরিক।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় প্রাণ হারান এক হাজার ২০০জন, বন্দি করা হয় আনুমানিকত ২৪০ জনকে৷ হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েল, জার্মানি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র।

জবাবে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় আকাশ ও স্থলপথে ব্যাপক হামলা চালায়৷ হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ।

বিমানবন্দরে স্টাইনমায়ারকে স্বাগত জানাতে দেরি হওয়া বিষয়ে কাতার বা জার্মান দুই পক্ষেরই কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন