বেতছড়ায় কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন সেতু ও সড়ক নির্মাণ
বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি তারাছা ইউনিয়নের যেতে নদীর পথে দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। ভোগান্তি পোহাতে হত সেসব দুর্গম এলাকার বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষের। সড়ক যোগাযোগের অভাবে কৃষি পণ্য নায্যমূল্য দাম না পাওয়ার ফলে জমিতেই নষ্ট হত কৃষকের ফসল। তাছাড়া দুর্গমতার কারণে সেসব বাসিন্দাদের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধাও ছিলো অপ্রতুল। কিন্তু সেটি এখন পাল্টে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অর্থায়নে যোগাযোগের মান বাড়াতে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক ও সাঙ্গু নদীর বুকে উপর নির্মিত হয়েছে দৃশ্যমান সেতু। যার ফলে যান চলাচল ও কৃষিপণ্য পরিবহনের পাশপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা ।
স্থানীয়রা জানান, সড়ক ও সেতু হওয়ার আগে একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম ছিল নৌপথ। সে নদীর পথ দিয়ে যেতে হত জেলা শহরে। যাতে সময় ব্যয় হত দুই থেকে তিন ঘণ্টা। যোগাযোগের অভাবে কৃষি পণ্যে নায্য মূল্য পাওয়া যেতো না। পাশাপাশি অনেক রোগীও মাঝ পথে মারা যেত। দুর্ভোগে দিন কাটাতে হয়েছে দীর্ঘ বছর ধরে। কিন্তু এখন সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা ও সেতু হওয়ায় সেসব এলাকার চাষিরা নিজ জমিতে ফলাদি পণ্যের নায্য মূল্য পাচ্ছেন। তাছাড়া কৃষি পণ্যের পাশাপাশি শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিতে কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছেন শহরে। এতে খুশি বেতছড়া ও বৈদ্য পাড়ার গ্রামের কয়েকশত মানুষ।
বেতছড়া ও বৈদ্য পাড়া বাসিন্দা নুমং সিং মারমা ও উমংসিং মারমা বলেন, সড়ক ও সেতু না হওয়ার আগে তাদের যাতায়াতে অনেক সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছিল। শুধু তাই নয় কৃষিপণ্যে নায্যমূল্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত ছিল। কিন্তু এখন সড়ক যোগাযোগ ও সেতু পেয়ে খুশি তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিম্বুক-রুমা সড়কে সাত মাইল থেকে ৫ কিলোমিটারে নির্মাণ করা হয়েছে উন্নত মানের কার্পেটিং সড়ক। সড়কটি পাহাড়ের বুক চিড়ে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে চলে গেছে তারাছা ইউনিয়নের বেতছড়া ও বৈদ্য গ্রাম পর্যন্ত। তাছাড়া সড়কের পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে সেচ ড্রেইনের। সাঙ্গু নদীর বুকের মাঝখানে জেলায় ৬ষ্ঠ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে দৃশ্যমান সেতু। যা দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬২ মিটার। সেতুটি নির্মাণের পর যাতায়াত সহজ হয়ে উঠেছে তারাছা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের।
২নং তারাছা ইউপি চেয়ারম্যান উনুমং মারমা বলেন, আগে এই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করতেন। সড়ক না থাকায় নদীর পথ ব্যবহার করতে হত। যার কারণে কোন রোগী নদীর মাঝপথে মারা যেত। কিন্তু এখন স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এলাকায় সড়ক ও সেতু হওয়ার ফলে এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে। যার ফলে এলাকাবাসীরা অনেক খুশি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, বান্দরবানের সবচেয়ে কাছে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়ন। শহরে পার্শ্ববর্তীর ইউনিয়ন হলেও সবকিছু থেকে বঞ্চিত ছিল । তাছাড়া ঝুকিঁ নিয়ে বর্ষার মৌসুমে কৃষিপণ্য নিয়ে নদী পথে চলাচল করতে হত। কিন্তু বর্তমান সরকার আমলে রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যোগাযোগের ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।
বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, তারাছা ইউনিয়নের বেতছড়া এলাকার বাসিন্দারা কষ্ট পেত। যার কারণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে দৃশ্যমান সেতু ও সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। যে সড়কটি বেতছড়া হয়ে রোয়াছড়ি ও কালাঘাটা পর্যন্ত সংযোগ সড়ক হবে। তাছাড়া এসব এলাকায় নিসন্দেহে পর্যটক আগমন ঘটবে এবং আগামীতেও সবকিছু আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করছি।
স্থানীয় প্রকৌশলী অধিদপ্তর ও উন্নয়ন বোর্ড তথ্যমতে, গেল ২০২১-২২ অর্থ সালে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছিল ১৮ কোটি টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১৬২ মিটার দৈর্ঘ্যের সাঙ্গু নদীর বুকে দৃশ্যমান সেতু তৈরি করতে ব্যয় হয়েছিল ১৮ কোটি টাকা। এসব প্রকল্প মেসার্স হিমু কনস্ট্রাকশন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২৩ সালে কাজ শেষ হয়।