ভালোবাসা দিবসে প্রেমিক যুগল-নবদম্পতি আর বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখরিত পাহাড়ের পর্যটন স্পটগুলো

Rangamati Parjoton Pic
আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে এক অপার লীলাভূমি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। পার্বত্য শহর রাঙামাটি পর্যটকদের কাছে অতি প্রিয় একটি নাম। তাই এবারে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রূপের রানীখ্যাত এই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই জেলায় লাখো পর্যটকের পদচারনায় মুখরিত পার্বত্য এই জনপদ। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই রাঙামাটিতে আসতে শুরু করে শত শত পর্যটক।

রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের তথ্য মতে, এবারের ভালোবাসা দিবসে রাঙামাটি জেলায় একলাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। শুক্রবার সরকারী ছুটির দিন ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে মৌসুমের শেষের দিকে আবারো মুখর হয়ে উঠে রাঙামাটি শহর। চাঙ্গা হয়ে উঠে জেলার পর্যটন ব্যবসা। পর্যটকদের পদচারনায় এইদিনটিতে রাঙামাটি পরিণত হয় উৎসবের শহরে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে আসা পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোগে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ দল বেধে পিকনিক ও ব্যক্তিগতভাবে বেড়াতে বের হয়। আর এক্ষেত্রে শুধুমাত্র শুক্রবারই রাঙামাটির অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি কোটি টাকা।

ভালোবাসা দিবসের দুপুর বেলায় রাঙামাটি ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত ব্রীজে ঘুরতে গেলে দেখা মেলে সুদূর দিনাজপুর থেকে হানিমুনের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে আসা নবদম্পতি হাসিবুল রেজা ও আফরীন জান্নাতের সাথে। তাদের সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে আগমনের পর অনুভূতি জানতে চাইলে উভয়ে বলতে শুরু করেন। পরক্ষণেই এই জুটির প্রধান কর্তাকে থামিয়ে দিয়ে আফরীন জান্নাত অর্নগল বলতে বলতে জানালেন।

এখানে পাহাড়ের কোল ঘেঁসে ঘুমিয়ে থাকে শান্ত জলের হ্রদ। সীমানার ওপাড়ে নীল আকাশ মিতালী করে হ্রদের সাথে, চুমু খায় পাহাড়ের বুকে। এখানে চলে পাহাড় নদী আর হ্রদের এক অপূর্ব মিলনমেলা। চারিপাশ যেন পটুয়ার পটে আঁকা কোন জল রঙের ছবি। কোন উপমাই যথেষ্ট নয় যতটা হলে বোঝানোয় যায় রাঙ্গামাটির অপরূপ সৌন্দর্য। এখানকার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা এক ভূবন যেখান আপনার জন্য অপেক্ষা করছে নয়ানাভিরাম দৃশ্যপট। নিজেদের পছন্দেই প্রেম অতঃপর বিয়ে..তাই এবারের ভালোবাসা দিবসকে স্বরণীয় করে রাখতে আমাদের বিয়ের পর হানিমুনের জন্য আমার ইচ্ছেটাকেই আমার প্রিয় মানুষটির সাথে একান্তভাবে কাঠানোর লক্ষ্যে আমি এখানে এসেছি।

রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রীজ, কাপ্তাই হ্রদ, লেকে উপারে অবস্থিত চাংপাং পর্যটন স্পটসহ শহরের পর্যটন স্পটগুলোতে যেন তীল ধারনের ঠাঁই নেই। শহরের আবাসিক হোটেল, রেস্তোরা ও বাস কাউন্টারে দেখা গেছে বাড়তি চাপ।
কাপ্তাই লেকের ওপারে হ্রদের মাঝখানে অবস্থিত নয়নাভিরাম দৃশ্য সম্বলিত উপজাতীয় পর্যটন স্পট “চাং পাং”এর পরিচালক সুনয়ন ত্রিপুরা দীপু জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন তাদের আয় হয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা। যা অন্যদিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। গ্রাহকের তালিকায় রয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকা, নবদম্পতি থেকে শুরু করে বিদেশী পর্যটকবৃন্দ। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি একটু সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে তাদের রাজনীতি থেকে এখানকার পর্যটন শিল্পের কথা মাথায় রেখে কর্মসূচি দেন তাহলে আমাদের মাধ্যমে সারাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

পর্যটন মৌসুন শুরুর আগে থেকেই দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অন্যতম পর্যটন শহর রাঙামাটি ছিলো একেবারে পর্যটক শুন্য। জাতীয় নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় মৌসুমের শেষের দিকে আবারো আসতে শুরু করে পর্যটক। ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পায় রাঙামাটির পর্যটন শিল্প। আশার আলো দেখতে শুরু করেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। আর রাঙামাটির পর্যটন মোটেল সহ আবাসিক হোটেলগুলোর প্রায় সবগুলোতেই শতভাগ বুকিং ছিলো বলে জানাগেছে সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো থেকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন