ভুলতথ্যের উষ্কানিতে বেকায়দায় প্রশাসন: নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে ‘ভূমিহীনদের’ সম্পদ বিবরণ

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কচুবনিয়াস্থ বড়ুয়া পাড়ায় উচ্চ আদালয়ের রায় বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে প্রশাসন। এ নিয়ে গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবত জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। উচ্ছেদ হওয়া বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৪৮ বড়ুয়া পরিবারকে গোপনে ইন্ধন যুগিয়ে প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলার তথ্যও বেরিয়ে আসছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে। ইতিমধ্যেই উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের সম্পদের বিবরণ ও ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে উর্দ্ধতন প্রশাসনকে অবহিত করেছে স্ব স্ব আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু মৌজার উত্তর বড়ুয়া পাড়ায় সরকারের প্রায় ২৫ একর জায়গার উপর দীর্ঘ ১০-১২ বৎসর যাবত ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্থাপনা তৈরীর মাধ্যমে ভোগ দখল করে আসছিল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৪৮ পরিবার। ২০১০ সালে উক্ত জায়গা কৃষি ব্যাংকের অর্থ ঋণ আদালত থেকে সিট নং- ৪, প্লট নং- ১৮৮৩ আন্দরের ২৫ একর সরকারী জমির দীর্ঘ মিয়াদী লীজ নেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা সুব্রত বড়ুয়া ও তার স্ত্রী নিশু বড়ুয়া।

সম্প্রতি জায়গার দখল পেতে আদালতে সুব্রত বড়ুয়ার উচ্ছেদ মামলার পর বান্দরবান জেলা যুগ্ম জজ আদালত জায়গাটির দখল আমল বুঝিয়ে দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। গত শনিবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ৪৮ বৌদ্ধ পরিবারকে জায়গা থেকে সরিয়ে নেন। এসময় প্রাথমিক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারকে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়। এর পর থেকে একটি মহলের ইন্ধনে এসব বড়ুয়া পরিবার নিজ স্থায়ী বসতভূমিতে ফিরে না গিয়ে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জায়গায় তাদের পুন: বহাল করতে ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজার এলাকায় অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে তারা মিয়ানমারে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় গত সোমবার বান্দরবান জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফারুক আহামদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: জসিম উদ্দিন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু শাফায়ৎ মুহম্মদ শাহে দুল ইসলাম, থানা অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল খায়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারদের প্রশাসনিক সহায়তার আশ্বাস দেন। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, উচ্ছেদ হওয়া ৪৮ পরিবারের মধ্যে ২৭ পরিবার সাবলম্বী এবং নিজ বসতভূমির বাইরেও জায়গা-জমি, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অপর ১২ পরিবার এখনো সরকারী উক্ত জায়গায় স্থিত আছে। জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া লুলু বড়ুয়ার চার একর জমি এবং তাঁর নিজের একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল রয়েছে, এছাড়াও রুপন বড়ুয়ার পাচঁ একর জমি ও বসতবাড়ি-দোকান, শুধাংশু বড়ুয়ার পাচঁ সন্তানের আট একর জমি, পল্টু বড়ুয়ার বাগানবাড়ি ও জমি, অঙ্গি মোহন বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি ও বসতভিটা, নির্মল বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি ও রাস্তার পার্শ্ববর্তী জমি, সুদত্ত বড়ুয়ার মায়ের নামে বসতভিটাসহ টিন সেড বাড়ি, তরুনী সেন বড়ুয়ার বসতবাড়ি ভিটা, বারন বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি, রঞ্জিত বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি ও জমি, মো: আবদুর রহিম কালুর প্রচুর অর্থ সম্পদ ও বসতবাড়ি, জমি, স্বপন বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি, রতন বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি, বাদল বড়ুয়ার দোকান, বসতভিটা ও সাইন্সেকৃত সারের ডিলার, অতিল বড়ুয়ার বড় টিন সেড বাড়ি, ফনু বড়ুয়ার পিতার নামীয় জায়গা জমি, পুলিশ ফাড়ির পাশে উপদেশ বড়ুয়ার বসতবাড়ি, রুপালী বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি, স্বপ্না বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি, অলসি বড়ুয়ার বসতভিটা এবং চট্টগ্রামে প্লট, বিশাখা বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি, দিপ্তি বড়ুয়ার দুই সন্তান মালেশিয়া প্রবাসী ও চট্টগ্রামে প্লট, অরবিন্দ বড়ুয়ার বসতভিটা, জল্টু বড়ুয়ার সুপারি বাগানসহ টিন সেড বাড়ি, মৃদুল বড়ুয়ার টিন সেড বাড়ি ভিটা রয়েছে।

এছাড়াও আদালতের বিচারাধীন মামলার উক্ত জায়গায় এখনো বসবাস করছেন মিলন বড়ুয়া, বাবুলি বড়ুয়া, রিটা বড়ুয়া, আপন বড়ুয়া, কাফল বড়ুয়া, রবি বড়ুয়া, বাসনা বড়ুয়া, মুন্নি বড়ুয়া, ভেদু বড়ুয়া, লিটন বড়ুয়া, বিনা বড়ুয়া, নিরধন বড়ুয়া। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উচ্ছেদ হওয়ার পরিবারের মধ্যে অরবিন্দ, ঝর্ণা, রুপালী, বকুলী বড়ুয়া সম্পূর্ণ সহায় সম্বলহীন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু শাফায়ৎ মুহম্মদ শাহে দুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে লীজ গ্রহীতাকে জায়গা বুঝিয়ে দিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। প্রাথমিক ক্ষতিগ্রস্তদের প্রশাসনিক সহযোগিতাসহ পুর্নবাসনের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আবুল খায়ের জানান, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারদের প্রশাসনিক ও আইনী সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসন। তবে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারকে উষ্কানী দিয়ে প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলার বিষয়টিও তাঁরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছেন বলে জানান তিনি।

ঘুমধুম ইউনিয়নের একাধিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ প্রতিবেদককে জানান, আদালতের রায়ের প্রতি যেভাবে সম্মান দেখানো উচিত ঠিক একইভাবে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের মধ্যে যাদের কোন সহায় সম্ভল নেই তাদের পূর্নবাসন করাও প্রয়োজন। কিন্তু এসব গ্রামের মানুষ নিয়ে যাতে পুতুল খেলা না হয় সে বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন