ভূমি ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত মানিকছড়ি: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে

 gggg

নিজস্ব প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলার নির্ঝণ জনপদ উত্তর ও দক্ষিণ হাফছড়ি, বক্রিপাড়া, মনাধন, ওয়াকছড়িসহ বেশ কিছু এলাকায় পরিত্যক্ত টিলা ভূমি ভূমিতে সম্প্রতি উপজাতি কর্তৃক আবাদ ও মন্দির নির্মাণকে ঘিরে ‘পাহাড়ী-বাঙ্গালী বিরোধ যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ইস্যুটিকে প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের উদ্যাগ নিলেও তাতে সমাধান আসছে না। কেননা, তাতে সাড়া দিচ্ছে না উপজাতিরা। ইউপিডিএফের ছত্রছায়ায় উপজাতিরা ভূমি রক্ষা কমিটির আড়ালে বাঙ্গালী কর্তৃক পাহাড়ীদের ভূমি বেদখলের অভিযোগ এনে সভা-সমাবেশ ,সড়ক অবরোধ পালন করছে।

অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট ওই এলাকায় একটি মাদ্রাসা ও বাঙ্গালীর খামার বাড়ী উপজাতী দুর্বৃত্ত কর্তৃক পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গতকাল ১০ আগস্ট মানিকছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ পালন করেছে বাঙ্গালী ছাত্রপরিষদ। ফলে গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী বাঙ্গালীরা তাদের পরিত্যক্ত ভূমি জবরদখলের আশংকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ির গচ্ছাবিল, হাতিমুড়া, গবামারা ও রামগড়ের হাফছড়ি গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালীরা গুচ্ছগ্রামের আসার পূর্বে রামগড় ও মানিকছড়ির নির্ঝণ জনপদ বক্রিপাড়া, মনাধন পাড়া,ওয়াকছড়িপাড়া, উত্তর হাফছড়ি, দক্ষিণ হাফছড়ি এলাকায় বসবাস করত। ১৯৮৩-৮৪ সালে শরনার্থী হিসেবে কবুলিয়ত মূলে পরিবার প্রতি ৫ একর টিলা ভূমি বন্দোবস্তী পেয়ে তারা সেখানে সপরিবারে বসবাস করে আসছিল। পরবর্তীতে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার অজুহাতে বাঙ্গালীদের গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তর করে সরকার। ফলে পরিত্যক্ত থেকে যায় বাঙ্গালীদের ভূমিগুলো। যদিও ওই সব এলাকার আশে-পাশে উপজাতিরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে অনেক আগে থেকেই। উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে ছিল সম্প্রীতির মিলন। গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালীদের নিয়মতি ওইসব ভূমিতে গিয়ে চাষাবাদও করত।

সম্প্রতি রহস্যময় এক ধর্মীয় নেতার ইন্ধনে ওই ভূমিতে কতিপয় উপজাতিরা মন্দির নির্মাণ করতে গেলে উভয়ের মাঝে সৃষ্টি হয় সংঘাতময় পরিস্থিতি। ফলে প্রশাসন তড়িৎ গতিতে ভূমির রের্কড পত্র যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যাগ গ্রহণ করে । গত ২৬ জুলাই প্রথম শুনানীর দিন ধার্য্ করলে উপজাতিরা তাতে অনুপস্থিত থাকায় পুনরায় ৩ আগস্ট শুনানীর তারিখ নির্ধারিত হয়। ওই দিন খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবদুল রহমান উপজেলা পরিষদ হল রুমে শুনানী গ্রহন করেন। এ সময় শুনানীতে উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, ইউএনও যুথিকা সরকার, সাব জোন কমান্ডার জিয়াউল হক, ও.সি মো. শফিকুল ইসলাম, কার্বারী উদ্রাসাই মারমা. যুগেশ চাকমা (কার্বারী) নিয়ং মারমা (কার্বারী),ইউপি সদস্য মো. মোশারফ হোসেনসহ ৫জন অভিযোগকারী (উপজাতি)ও ৫ জন বিবাদী (বাঙ্গালী)উপস্থিত ছিলেন।

শুনানীর শুরুতে উপজাতিরা বলেন, অর্ধশত বছরের অধিক সময় ধরে তারা ১ম শ্রেণীর ভূমির মালিকানা সূত্রে এবং খাস টিলার কিছু অংশ দখলীয় সূত্রে বসতি গড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে।

অন্যদিকে বাঙ্গালীরা দাবী করে, ১৯৮৩-৮৪ সনের কবুলিয়ত মূলে (শরনার্থী) সরকার কর্তৃক ভূমি বন্দোবস্তী পেয়ে বসবাস করছে। কিন্তু ১৯৮৭-৮৮ সালে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে তৎকালীন সময়ে সরকার বাঙ্গালীদেরকে গুচ্ছগ্রামে জমায়েত করার কারণে ওই সব বসত ভিটা পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

সম্প্রতি সময়ে সেখানে উপজাতিরা মন্দির নির্মাণের নামে এবং বাঙ্গালীরা সৃজিত ফল-ফলাদি রক্ষণাবেক্ষণে গেলে উভয়ের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এতে প্রশাসন শুনানীর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শুনানীকালে উভয়ে উপস্থাপিত রেকর্ডপত্র যাচাই-বাচাইয়ে বৈধ মালিকদের মাঝে ভূমি বন্টন হলে কারো আপত্তি থাকবে না মর্মে একমত পোষণ করে সকলে। কিন্তু ৫ আগস্ট বাঙ্গালী কর্তৃক পরিত্যক্ত টিলা ভূমিতে খামার তৈরির অভিযোগ এনে উপজাতিরা খাগড়াছড়ি-চট্রগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয় এবং ৬ আগস্ট উপজেলায় অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ পালন করে।

7

অন্যদিকে ওই দিন সন্ধ্যায় উত্তর হাফছড়ির নির্ঝণ অরণ্যে একটি এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও পঙ্গু আবদুস ছালামের একটি খামার ঘর জ্বালিয়ে দেয় উপজাতি দুর্বৃত্তরা এমন অভিযোগ এনে ১০ আগস্ট সকাল-সন্ধ্যা উপজেলায় সড়ক অবরোধ পালন করে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ। উভয়ের অবরোধ, সমাবেশ চলাকালে প্রশাসন আইন-শৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করায় কর্মসূচীতে ভাটা পড়ে।

অসহায় উডজাতিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নির্ঝন লোকালয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীদেরকে আন্দোলনে নামাচ্ছে ইউপিডিএফ! তাদের শেখানো ও দেখানো পথে চলতে বাধ্য করছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ফলে দিন দিন এখানকার পরিস্থিতি জটিল রূপ ধারণ করছে বলে মনে করছেন গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালী ও জনপ্রতিনিধিরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও গচ্ছাবিল গুচ্ছগ্রামের অধিবাসী মো.আবুল কালাম বলেন, গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী বাঙ্গালীরা পাহাড়ে এসে যেসব জায়গায় বসতি গড়েছিল আজ সেগুলো পরিত্যক্ত। এখন উপজাতিরা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অসহায় উপজাতিদের ফুসলিয়ে ওই সব ভূমি আদিবাসীদের বলে যে দাবী করছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপ-প্রচার।

উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, মানিকছড়িতে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি পরিত্যক্ত ভূমি আবাদ, মন্দির নির্মাণকে ঘিরে এবং উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ভূমি বেদখলের যে অভিযোগ উঠছে সত্যতা যাছাই পূর্বক তা দ্রুত সমাধান করা উচিত। পাহাড়ী-বাঙ্গালী উভয়কে মনে রাখতে হবে সংঘাত কখনও কল্যাণ বয়ে আনবে না।

এদিকে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের ডাকে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধে পুলিশ পাহারায় কিছু যানবাহন চলাচল করতে দেখো গেছে। বাঙ্গালী ছাত্রপরিষদের নেতা-কর্মীরা গচ্ছাবিল, জামতলা,গবামারা ও হাতিমুড়ায় পিকেটিং করতে বার বার রাস্তায় অবস্থানে চেষ্টা করলে পুলিশের টহলের কারণে পিকেটিং স্থায়ী হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টায় গচ্ছাবিল বাজার থেকে শত শত বাঙ্গালীদের উপস্থিতিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল পূর্ব পথসভায় বক্তারা বলেন, উপজাতিদের ব্যানারে ইউপিডিএফ এখানে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে বাঙ্গালীদের মাঝে আতংক ছড়াচ্ছে। তাই ওই সব নির্ঝণ এলাকায় দ্রুত নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনসহ মাদ্রাসা ও খামারবাড়ী পুড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনার জোরদাবী জানান তারা। অন্যথায় অচিরেই আরো কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারী দেন বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ নেতারা।

মানিকছড়ি থানার ও.সি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আইন-শৃংখলা রক্ষায় প্রশাসন সর্বোচ্ছ সর্তক রয়েছে। কেউ আইন অমান্য করে এলাকার শান্তি বিনষ্ঠ করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন