মাটিরাঙ্গায় বিএনপি প্রার্থির উপর হামলা, জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই: আটক ১

বাদা

স্টাফ রিপোর্টার:

খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মাটিরাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সরকার দলীয় সমর্থক কর্তৃক ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, ব্যালট ছিনতাই ও বিএনপি প্রার্থির উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সকাল সাড়ে ১১ টার সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাটিরাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এ ঘটনা ঘটে।

পার্বত্যনিউজের গুইমারা প্রতিনিধির পাঠানো রিপোর্টে জানা যায়, এসময় হামলাকারীরা ৫ বাণ্ডিল ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। এর মধ্যে দুই বাণ্ডিল ব্যালট জাল ভোট আকারে ব্যালট বাক্সে ঢোকানো হলেও, সাংবাদিকদের উপস্থিতির কারণে আরো তিন বাণ্ডিল বাক্সে ভর্তি না করেই নিয়ে যায় তারা। এসময় বিএনপি’র মেয়র প্রার্থি বাঁধা দিতে গেলে তার উপর হামলা করে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। হামলায় তিনি আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে সহকারী পোলিং অফিসার সেলিম রানা তাদের ধাক্কা দিয়ে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করলে প্রশাসন ওই পোলিং অফিসারকে প্রত্যাহার করে নেয়।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহেদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এম মজিদ আলী, র‌্যাব ইউনিট, বিজিবি টহল উপস্থিত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ভোট গ্রহণ শুরু করতে বলেন। জেলা প্রশাসক ধানের শীষ প্রতীকের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। এ ঘটনায় দুই ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে ভোট চালু হলে বিএনপি প্রার্থি ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখার দাবী জানালেও নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা তার দাবী না শুনে ভোট গ্রহণ অব্যাহত রাখে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি প্রার্থি বেলা আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।

বিএনপি প্রার্থী বাদশা মিয়া অভিযোগ করে বলেন, নানা ভয়ভীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমার জানা মতে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা ভোট দিচ্ছে বলে আমি জানি, কিন্তু এই কেন্দ্রে(৮নং কেন্দ্র পাইলট হাইস্কুল) আসার পর জানতে পার এখানে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হচ্ছে জোরপূর্বক। আমি দ্রুত ৫ নং বুথে ঢুকতে বাধা দেয়, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাকে এলোপাথারি কিল ঘুষি মারতে থাকে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ও পোলিং অফিসারের সামনেই ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্টকে বের করে দিয়ে নৌকার প্রতীকে সীল মারে এবং ব্যালট ছিনিয়ে নেয়। এসময় বাদশা মিয়াকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশ কনেষ্টেবল লক্ষণ এবং ধানের শীষের প্রধান এজেন্ট মনিন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা আহত হয়েছেন।

তবে এ ঘটনা অস্বীকার করেন আওয়ামলীগ প্রার্থী নৌকা প্রতীকের প্রধান এজেন্ট সুভাষ চাকমা। তিনি বলেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর অভিযোগ সত্য নয়, আওয়ামীলীগের বিজয় নিশ্চিত জেনে তিনি ইতিপূর্বেও এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন এবং আজও কাল্পনিক অভিযোগ করছেন।

এদিকে ঘটনার দুই ঘণ্টা পর অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত মো. সেলিম নামে একজনকে আটক করে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্না এই আটকের কথা নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও মেয়র প্রার্থির ৯টি ব্যালট ও কাউন্সিলর প্রার্থির ৪৯ ব্যালট বাতিল করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ৯ নং বাইল্যাছড়ি কেন্দ্রে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হলেও পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আব্দুর রহীম নামে একজনকে আটক করলেও মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

অপর দিকে বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। ভোট শুরুর আগে থেকেই অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। তবে কর্তব্যরত ম্যাজিষ্ট্রেট ভোট কক্ষে সাংবাদিকদের প্রবেশের উপর কড়াকড়ি করেন এবং ছবি নেয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন।

৮নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আমান উল্লাহ জানান, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত কিছু সময় ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকলেও আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত শতকরা ৪০ভাগ ভোট কাষ্টিং হয়েছে বলে দাবি করেন। এ কেন্দ্রের  মোট ভোটার ২হাজার ৪৩৬ জন বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন