মানিকছড়িতে ইফা’র দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়

fec-image

ইসলামী ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এর পরিচালনায় দেশব্যাপি মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণ শিক্ষা কার্যক্রম তদারকিতে উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা তিনজন । এদের মধ্যে মানিকছড়ি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়ারটেকার ও সাধারণ কেয়ারটেকার এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি আলাদা, আলাদাভাবে দায়িত্ব ও ব্যক্তি কেন্দ্রীয় নানা কল্পকাহিনী সম্বলিত অভিযোগ উঠায় উপজেলার তৃণমূলে ইফা’র সম্প্রতিকালের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সচেতন মহল বলছে ফিল্ড সুপারভাইজার নিয়মিত কর্মস্থলে না থাকায় সহকারীরা নানা অনিয়মে জড়িয়েছে। এতে এখানে চরমভাবে ইফা’র কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

ইফা’র অফিস ও অভিযোগ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৬৫টি মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণ শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে। একটিতে বয়স্ক ও ৬৪টি প্রাক-প্রাথমিক এবং সহজ কোরআন শিশু শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে নানা অনিয়মে ১১টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। আর এসব কার্যক্রম তদারকিতে ফিল্ড সুপারভাইজার, মডেল কেয়াটেকার ও সাধারণ কেয়ারটেকার পদ রয়েছে। এর মধ্যে এখানে কর্মরত আছেন একজন ফিল্ড সুপারভাইজার,একজন ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়ারটেকার ও একজন সাধারণ কেয়াটেকার । ২০১৮-২০২০ জানুয়ারী-মার্চ পর্যন্ত উপজেলার ৬৫টি ইফা’র শিক্ষা কার্যক্রম তদারকিতে থাকা ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়াটেকার মো. আবুল কাশেম ও সাধারণ কেয়ারটেকার মো. মঈনুল হকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আলাদা,আলাদা ভাবে উপ-পরিচালক, ইফা, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বরাবরে দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও একজন শিক্ষক।

সাধারণ কেয়ারটেকার মো. মঈনুল হকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে বাদী হয়েছেন মো. আবদুল মান্নান, জাহাঙ্গীর ও সফিক। অভিযোগে এদের বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ না থাকলেও সাধারণ কেয়ারটেকার বিরুদ্ধে ভূয়া কেন্দ্র, ভূয়া শিক্ষক দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, অফিসে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ জায়গা-জমি দখল ও একটি হত্যা মামলায় জড়িত উল্লেখ করে নানা কল্প-কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। যদিও অভিযুক্তের দাবি তিনি জায়গা-জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগে পুলিশি চার্জশীট এবং হত্যা মামলায় আদালত থেকে অনেক আগেই দায়মুক্তি পেয়েছেন।

এর পরও বাদীরা ওই বিষয়গুলো উল্লেখ করে দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। যা এখনো তদন্ত শুরু করেননি ইফা, খাগড়াছড়ি’র উপ-পরিচালক।
অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়ারটেকার মো. আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বর মাসে ইফা’র উপ-পরিচালক বরাবর এবং ১০ জানুয়ারি-২০২১ তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবরে চেঙ্গুছড়া গুচ্ছগ্রাম জামে মসজিদ কেন্দ্রের শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান কর্মস্থল ত্যাগ করলেও তাকে কর্মস্থলে উপস্থিত দেখিয়ে বেতন-ভাতা ভোগ করার অভিযোগ করেন দুই শিক্ষক মো. ফয়েজ উল্লাহ ও মো. মতিউর রহমান। এতে বলা হয় মো. আবুল কাশেম কর্মস্থল ত্যাগ করা শিক্ষক মো. নুরুজ্জামানকে কর্মস্থলে বহাল দেখিয়ে ওই শিক্ষক থেকে চেকের মাধ্যমে দু’টি চেকে ২৬ হাজার ৫ শত টাকা উত্তোলন করেন ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়ারটেকার মো. আবুল কাশেম। যদিও প্রথম অভিযোগে সত্যতা পাওয়ায় সম্প্রতি মো. আবুল কাশেমকে অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্থাৎ ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়ারটেকার থেকে তাকে অব্যাহতি দেন ইফা কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সাধারণ কেয়ারটেকার এর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত শুরু না হতেই মো. আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দায়ের হওয়ায় পুরো উপজেলার ইফা শিক্ষার কার্যক্রম ও অফিস প্রধান( ফিল্ড সুপারভাইজার) মো. ইউসুফ বাহার এর কর্মদক্ষতা ও কর্মস্থলে অনিয়মিত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল। অনেকে মনে করছেন অফিস প্রধান সহযোগীদের কর্মকাণ্ড ঠিকমতো মনিটরিং না করার সুযোগে সাধারণ কেয়ারটেকার ও ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়ারটেকার কম-বেশি অনিয়মের সুযোগ নিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মের পাশাপাশি অভিযোগকারীরা অভিযুক্তদের পারিবারিক নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অভিযোগে এসে ইফা’র সামগ্রিক কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ করতে কাজ করছে একাধিক মহল। বিষয়টি অনাকাঙ্খিত। এ প্রসঙ্গে সাধারণ কেয়ারটেকার মো. মঈনুল হক তার বিরুদ্ধে উপস্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভূয়া কেন্দ্র, ভূয়া শিক্ষক কিংবা এই কার্যক্রমে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করার সুযোগ নেই। এছাড়া এসব টিম ওয়ার্ক। এখানে একা অনিয়ম, দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। এর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে । পর্দার আড়ালে থেকে অফিস সংশ্লিষ্ট কেউ না কেউ এটা করাচ্ছে। অপরদিকে আরেক অভিযুক্ত মো. আবুল কাশেমকে এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সে ফোন রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে এবং উপজেলায় ইফা’র শিক্ষা কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কী না তা জানতে চাইলে উপজেলা ফিল্ড সুপারভাইজার মো. ইউসুফ বাহার নিজেকে সম্পূর্ণ দায়মুক্ত রেখে বলেন, পর পর দুইজন দায়িত্বশীল এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় আমরা বিব্রত! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে অভিযোগ দুইটিতে একে, অপরের হাত রয়েছে। ইতোমধ্যে মো. আবুল কাশেমকে পূর্বের একটি অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়ারটেকার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। জনপদে ইফা’র শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক ও স্বচ্ছ রাখতে অভিযুক্ত দু’জনের বিষয়ে ইফা’র খাগড়াছড়ি উপ-পরিচালক মো. মঞ্জরুল আলম সহসাই সিদ্ধান্ত নিবেন। অহেতুক কেউ ইফা’র কার্যক্রম নিয়ে ভূল বুঝার সুযোগ নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন