মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী স্কুলে বিমান হামলা চালাল, নিহত ৪ শিশু

fec-image

স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এতে কমপক্ষে চার শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১০ জনেরও বেশি মানুষ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির কারেনি (কায়া) প্রদেশের একটি স্কুলে এই হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার কারেনি (কায়া) প্রদেশের ডেমোসো টাউনশিপের একটি স্কুলে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে বোমা হামলা চালায়। এই হামলায় অন্তত চার শিশু নিহত ও আরও ১০ জনের বেশি আহত হয়েছে।

ডেমোসো শহরের একজন স্বেচ্ছাসেবক ইরাবতীকে জানিয়েছেন, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে সেখানকার ডাউসিই গ্রামের স্কুলে দুটি যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ এবং মেশিনগান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়।

ওই স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ওই এলাকায় জান্তা বাহিনী ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কোনও সংঘর্ষ না হওয়া সত্ত্বেও এই হামলা চালানো হয়েছে।

ডাউসিই গ্রামটি ডেমোসো শহরের প্রায় ১০ মাইল পশ্চিমে কারেনি প্রদেশের রাজধানী লোইকাও যাওয়ার রাস্তায় অবস্থিত। এটি এখন আংশিকভাবে কারেনি ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের (কেএনডিএফ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ওই স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘হামলার শিকার স্কুলটিতে কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ থেকে সুরক্ষার জন্য স্কুল কম্পাউন্ডে বোমা আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু হামলাটি হঠাৎ করেই হয় এবং এই কারণে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়নি শিশুরা।’

তিনি আরও বলেছেন, বোমা হামলায় বিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং হামলায় আহত অনেক শিশুর অবস্থা গুরুতর।

ইরাবতী বলছে, যুদ্ধের কারণে অন্য এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত লোকরা এই ডাউসিই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল এবং গ্রামের এই স্কুলে স্থানীয় ও বাস্তুচ্যুত উভয় শিশুরাই পড়াশোনা করত। এছাড়া জান্তা বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো পার্শ্ববর্তী আরেকটি গ্রামেও বোমাবর্ষণ করেছে। তবে সেই হামলায় হতাহতের পরিসংখ্যান এখনও জানা যায়নি।

কারেনি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কো হপোন নাইং ইরাবতীকে বলেছেন, ‘যুদ্ধবিমানগুলো সারা সকালজুড়ে গ্রামের ওপর দিয়ে উড্ডয়ন করেছে এবং একপর্যায়ে স্কুলে বোমাবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন শিশু নিহত হয় এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে। তবে হতাহতের সঠিক পরিসংখ্যান দেওয়া কঠিন।’

মিয়ানমারের এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে কারেনি প্রদেশে জান্তা বাহিনী ব্যাপকভাবে বোমা হামলা চালিয়েছে। কারণ এখানকার বাসিন্দারা ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল। মূলত এই সরকারকে তারা অবৈধ বলে মনে করে থাকে।

কারেনি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, জান্তা বাহিনী গত বছর কারেনি প্রদেশে ১৬০টিরও বেশি আর্টিলারি স্ট্রাইক এবং ৭৬টি বিমান হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ১৮০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত এবং আরও ১৪০ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে অ্যাডভোকেসি গ্রুপ প্রগ্রেসিভ কারেনি পিপল অনুসারে, এই বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় ৪৬টি ধর্মীয় ভবন, ২২টি স্কুল, ১৪টি হাসপাতাল এবং ২ হাজার ২৮১টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নিহত, বিশ্ব সংবাদ, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন