মিয়ানমারে ৩ শতাধিক জান্তা ঘাঁটি বিদ্রোহীদের দখলে

fec-image

দানা বাঁধা বিদ্রোহীদের আন্দোলনে উত্তাল মিয়ানমারের রাজনীতি। শক্তিশালী হয়ে উঠছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। দেশটিতে জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ আক্রমণ চালিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত তিন শতাধিক সামরিক ঘাঁটি ও ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা। এমনকি একটি শহরে শুরু হয়েছে বেসামরিক শাসন। এদিকে সংঘাত সত্ত্বেও দেশটিতে শিগগিরই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে জান্তা সরকার।

বিদ্রোহী সামরিক জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ও জাতীয় ঐক্য সরকার সমর্থিত (এনইউজি) তথাকথিত জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী সমন্বিতভাবে অপারেশন ১০২৭ নামে এই প্রতিরোধ আক্রমণ শুরু করেছে। গত ২৭ অক্টোবর থেকে উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্য থেকে এই লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়।

এখন এই লড়াই মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতেও জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, শিগগিরই মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই ভোটগ্রহণ হবে। মিয়ানমারে চলমান সংঘাত সপ্তম সপ্তাহে গড়িয়েছে।

এরই মধ্যে আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) সমন্বয়ে গঠিত বিদ্রোহী সামরিক জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স শান রাজ্যের প্রায় ৩০০ ঘাঁটি দখলে নিয়েছে। এ ছাড়া ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শান রাজ্যের অন্তত আটটি শহরের দখল নিয়েছে এই বিদ্রোহী জোট। এখন এই রাজ্যের আরেকটি শহর দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স।

এদিকে রাখাইন ও চিন রাজ্যের অন্তত ৪৫টি সামরিক ঘাঁটি ও তল্লাশি চৌকি দখল করেছে আরাকান আর্মি

উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্য থেকে সামরিক শাসন উৎখাতের জন্য শুরু হওয়া আক্রমণ সাগাইং, মান্দালায়ে ও ম্যাগওয়ে অঞ্চলের পাশাপাশি চিন রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। কাচিন ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মির সমর্থনপ্রাপ্ত পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) সাগাইং অঞ্চলের অন্তত তিনটি শহর দখলে নিয়েছে। অন্যদিকে চিন রাজ্যের প্রতিরোধ বাহিনী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত সাতটি শহর দখলে নিয়েছে।

এদিকে কারেনি রাজ্যে ১১ নভেম্বর থেকে অপারেশন ১১১১ আরেকটি জান্তাবিরোধী অভিযান শুরু করে কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ), কারেনি আর্মি, কারেনি ন্যাশনাল পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট ও পিডিএফ। কেএনডিএফ জানিয়েছে, অপারেশন ১১১১ শুরুর পর কারেনি রাজ্যের লোইকাও, দেমেসো শহরতলি ও দক্ষিণ শান রাজ্যের পার্শ্ববর্তী পেকন শহরতলির ৩৫টির বেশি জান্তা ঘাঁটি প্রতিরোধ বাহিনী দখলে নিয়েছে।

এদিকে কারেন, মোন রাজ্য ও বাগো অঞ্চলেও জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও মিত্র প্রতিরোধ বাহিনী মোনে শহর দখল করে। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক কার্যালয় জানায়, অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাত মিয়ানমারের এক-তৃতীয়াংশ জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়-বিষয়ক কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) সবশেষ তথ্যানুযায়ী, ২৬ অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের পাঁচ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে জান্তা শাসক ক্ষমতা দখলের পর দেশটির ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এদিকে গত ছয় সপ্তাহে নারী ও শিশুসহ ৩৬৩ জন বেসমারিক নাগরিক এই সংঘাতে নিহত ও ৪৬১ জন আহত হয়েছে।

ওসিএইচএ জানায়, খাদ্য, আশ্রয়, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাই এখন সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ও স্থানীয়রা সাহায্য সংস্থার সমন্বয়ে যেসব এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত মানুষের কাছে জরুরি ও জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম পৌঁছে দিচ্ছে। সূত্র : ইরাবতি, মিয়ানমার নাও

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন