মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী এখন মহালছড়িতে
উপজেলা প্রতিনিধি, মহালছড়ি :
বয়স কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ভ্রমণ পিপাসু বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী ফরাজীর জিবনে। বয়স তাঁর ৬১ বছর। বৃদ্ধ বয়সেই বাই সাইকেলে চড়ে তিনি স্বদেশ ভ্রমণে বের হয়েছেন। কোন ধরনের সরকারী ও বেসরকারী সহযোগীতা ছাড়ায় সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সমগ্র বাংলাদেশ। তাও একবার নয়, দুই দু’বার সাইকেল চালিয়ে ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় গিয়েছেন জাফর ফরাজী। সংগ্রহ করেছেন ৬৪ জেলা প্রশাসকের প্রত্যায়ন পত্র এবং ৮জন মন্ত্রীর সুপারিশ। বাই সাইকেল চালিয়ে গিয়েছেন ভারতের আজমির শরীফ।
শুক্রবার বিকালে তিনি রাঙ্গামাটি জেলা থেকে আসেন ৩য় ভ্রমনের ৪৪তম জেলা পার্বত্য খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায়। স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে জাফর ফরাজীর কথা হয়। তিনি জানান, এর আগে গত বছর এই শীতের মৌসুমে এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীমসহ বাই-সাইকেল করে ২০ সদস্যের একটি সাইকেল টিম মহালছড়ি এসে দুপুরে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন। সে বার মুসা ইব্রাহীমের টিমের সাথে ৫০টি জেলায় গিয়েছিলেন তিনি তখন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন তাদেরকে অনুষ্ঠান করে সংবর্ধনা দিয়েছিলো ।
তিনি আরো বলেন, এক সময় মানুষ পায়ে হেঁটে যেতেন পবিত্র হজ্ব পালনে। তাই কষ্ট করে হজ্ব পালনের ইচ্ছা জাফর ফরাজীর। শারীরিক শ্রমে হজ্বে যেতে বেছে নিয়েছেন সাইকেল। সাইকেল নিয়ে সুদূর আরব-আমিরাতে যাওয়া কঠিন ব্যপার। তাই নিজের ইচ্ছা শক্তির পরীক্ষায় জাফর ফরাজী ঘুরতে শুরু করেন সমগ্র বাংলাদেশ। দেশের ৬৪ জেলায় সাইকেলে ঘুরেছেন তিনি।
প্রয়োজন শুধু বাই-সাইকেলের হজ্ব যাত্রার সরকারি অনুমতি। এ জন্য ভিসা’র দাবীতে সাইকেলের প্যাডেলে ঘুরতে থাকে জাফর ফরাজী। পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব যেতে চেয়েছিলেন তিনি । ইতিমধ্যে ভারত ও ইরান মুক্তিযোদ্ধা জাফরকে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ভিসাও দেয়। এরপর পাকিস্থানের সীমানা দিয়ে যাবার জন্য পাকিস্থান দূতাবাসে ভিসার আবেদন করেন তিনি । আবেদন পত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা থাকায় পাকিস্থান দূতাবাস তার ভিসার আবেদন বাতিল করে দেয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ৬১ বছর বয়সি জাফর ফরাজী ৩য় বারের মতো ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬৪ জেলা ভ্রমণের জন্য বাড়ি ছেড়েছেন। একটি বাই-সাইকেলে কয়েকটি দেশের পতাকা লাগিয়ে ছুটছেন তিনি দেশের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। পাকিস্থানের বিরুদ্ধে গণ সচেতনতা বৃদ্ধিতে দেশ ভ্রমণ শুরু করেছেন এ মুক্তিযোদ্ধা।
ভিসার জন্য দেশ ঘুরতে গিয়ে সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের খবর পান তিনি। সাইকেল দিয়ে ছুটেছেন সেখানে ২০দিন উদ্ধার অভিযানে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। সেখানে উদ্ধার অভিযান দেখতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলার সুযোগ পান উদ্ধারকর্মী ফরাজী। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান, তার বাই সাইকেলে হজ্ব পালনের প্রবল আগ্রহের কথা।
জাফর ফরাজী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের মৃত আলম ফরাজীর ছেলে। জাফর ফরাজী ৫ সন্তানের জনক । বর্তমানে তার স্ত্রী ও সন্তানরা নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন । জাফর ফরাজী জানান, ১৯৭১ সালে কুমিল্লা ৪নং সেক্টরের কমান্ডার মোহাম্মদ সেলিমের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। সে সময় জীবন বাজি রেখে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছিলেন। সেই থেকে দীর্ঘ ৪৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের প্রতি পাকিস্থানের সেই শত্রুতা ভাব খুব একটা কমেনি । যা তিনি সম্প্রতি উপলব্ধি করলেন।
মুক্তিযোদ্ধা জাফর ফরাজী আরো বলেন, বিশ্ব ভ্রমন করতে গিয়ে পথে যদি তিনি মারা যান, তাহলে তাকে দাফনের জন্য সাথেই রেখেছেন কাফনের কাপড়। তার পুরনো সাইকেলে প্রয়োজনীয় কিছু মালামাল ও দুটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভ্রমণ করছেন তিনি। চলার পথে তার রাত কাটে ফুটপাতে বলে জানান। বাই সাইকেল দিয়ে পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সরকারের কাছে সহযোগীতা চেয়েছেন ।