রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ধান কাটছে সরকার, সু চির প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয়

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ফসলি জমি থেকে ধান কেটে নিতে শুরু করেছে দেশটির কৃষি অধিদফতর। শনিবার মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাখাইনের মংডু অঞ্চলের ৭১ হাজার একর জমি থেকে ধান কেটে নেওয়ার সরকারি আদেশ পেয়ে ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষি অধিদফতর। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র পক্ষ থেকেও ধান কাটার খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এই ধান কী হবে, তা নিয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে এই কর্মকাণ্ড মানবাধিকার কর্মীদের হতাশ করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চির দেওয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি সংশয়ের মুখে পড়েছে।

গত আগস্টের শেষের দিকে শুরু হওয়া সহিংসতায় মিয়ানমারের এই সীমান্ত অঞ্চলের বেশির ভাগই এখন জনমানবশূন্য। সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা। দেশটির বেসামারিক সরকারের নেতা অং সান সু চি রাখাইনের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কাজে দেখভাল করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার পর ধান কাটার এই উদ্যোগ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার রাখাইনের মংডুর ৭১ হাজার একর জমির ধান কাটতে শুরু করেছে সরকার। ব্যাপক সহিংসতায় মংডুর অধিকাংশ এলাকা থেকে পালিয়েছে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা।

বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে ডাকা হয়। মংডু কৃষি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা থেইন ওয়েই বলেন, আমরা আজ থেকে মিও থু জি গ্রামের জমি থেকে ধান কাটতে শুরু করেছি। আমরা বাঙালিদের কিছু ধানক্ষেত কাটতে যাচ্ছি; যারা বাংলাদেশে পালিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের অন্য এলাকা থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিকদেরকে নিয়ে আসা হবে। তবে ওই ধানের কী হবে সে ব্যাপারে জানতে মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।

এএফপি বলছে, মিয়ানমার সরকারের এই পদেক্ষেপের ফলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় পালিয়ে যাওয়া ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গার রাখাইনে ফেরা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াতে পারে। আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসনের অঙ্গীকার করেছে। যারা সেদেশের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দেখাতে পারবেন শুধুমাত্র তাদেরকেই ফেরত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অং সান সু চি। প্রত্যাবসনের এই পরিকল্পনা এখনো আঁধারেই রয়েছে। দেখা দিয়েছে বেশ কিছু প্রশ্নের; কে তাদেরকে ফেরার অনুমতি দেবে, তাদেরকে কীভাবে ফেরত নেয়া হবে এবং কীভাবে তারা ওই অঞ্চলে বসবাস করবেন তার যথাযথ উত্তর নেই। এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের ফসল কাটতে শুরু করেছে তারা।

রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতেই একাজ করা হচ্ছে বলে মিয়ানমার সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেছেন, ফসল কাটায় সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্ব দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যে রোহিঙ্গারা এসব জমিতে বীজ বপন করেছিলেন সেটার চেয়ে ফসল কাটতেই বেশি মনযোগী মিয়ানমার সরকার। তিনি মনে করেন, এসব বলপ্রয়োগের অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে বার্তা দেয়া হচ্ছে যে, ‘তোমাদের যা ছিল; এখন তা আমাদের এবং তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে না।’

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন