“★ সড়কের দায়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০০ পরিবারের ভোগান্তি ★ ১০ দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ”
সড়ক নয় যেন পুকুর!

রাখাইন পাড়া সড়কের বেহালদশা, দুর্ভোগে যান চলাচল বন্ধ

fec-image

সম্প্রতি টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গ্রামীণ জনপদের সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গিয়ে খানাখন্দক ও পুকুরের ন্যায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাতায়াতে চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগোষ্ঠী। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অভ্যান্তরীণ রাখাইন পাড়া ও বরইতলী সংযোগ সড়কটি এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। বন্যার পানিতে বিভিন্ন পয়েন্ট পুকুরের ন্যায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ার কারণে সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাখাইন পাড়া ও তার পার্শ্ববর্তী কযেকটি গ্রামের হাজার জনগোষ্ঠি এ সড়কের কারণে গেল বারদিন ধরে চরমভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়ক তো নয়, যেন পুকুর। সড়কটি অবিলম্বে চলাচল উপযোগী ও সংস্কার করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হারবাং ইউনিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে রাখাইন পাড়া সড়ক। এই সড়ক দিয়ে নিত্যদিন ৮-১০ হাজার মানুষ গাড়িযোগে ও পায়ে হেঁটে যাতায়ত করতো। চকরিয়া উপজেলা সদর ও পাশ্ববর্তী বরইতলী ইউনিয়নে যেতে সড়কটি এতদ্বঞ্চলের জনগোষ্ঠী ব্যবহার করে আসছিল। সম্প্রতি সময়ে বন্যার প্রবল স্রোতের তোড়ে পড়ে সড়কটি রাখাইন পাড়া এলাকার লামিংয়ের বসতবাড়ির সামনে বিশাশ আকারে ভেঙে তলিয়ে যায়। এতে ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের রাখাইন পাড়া, পাহাড়তলীসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন যাতায়ত করেন। ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ মানুষ ওই সড়কটি দিয়ে অধিকতর কম সময়ে উপজেলা সদরে পৌঁছাতে পারেন। বর্তমানে সড়কটি বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার কারণে কোন ধরনের ভারিযান, রিক্সা, মটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনও। বন্যা চলে যাওয়র ১২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রশাসন কিংবা স্থানীয় ইউপি পরিষদ থেকে এখনো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে চলাচলের সড়কটি বেহালদশায় রূপ নিয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানায়, ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড এবং তার আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের শত শত স্কুল, মাদ্রাসা ও বাজারগামী প্রতিদিন সহস্রাধিকের ওপরে মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। সম্প্রতি অবিরাম বর্ষণে ও ভয়াবহ বন্যার কারণে সড়কটি চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ৬ গ্রামের প্রায় দশ হাজার জনগোষ্ঠী। কোন ধরণের রোগী নিয়েও বাজারে যাতায়ত করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ এক নম্বর ওয়ার্ডটি একেবারে যোগাযোগের জন্য অনুপযোগী এবং এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত। জনগুরুত্বপূূর্ণ সড়কটি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের খাম খেয়ালিপনায় উন্নয়ন ও সংস্কার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এরই মাঝে গেল ভয়াবহ বন্যার তান্ডবে সড়কটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

হারবাং রাখাইন পাড়ার বাসিন্দা লামিং জানান, এবারের ভয়াবহ বন্যার কারণে পানিতে সবকিছু তলিয়ে নিয়ে যায়। আমার বাড়ির সামনে রাখাইন পাড়ার চলাচলের মূল সড়ক ভেঙে বড় পুকুরে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে আবারো ভারি বৃষ্টিপাত হলে হারবাং ছড়াখালের পানি এই ভাঙন দিয়ে প্রবেশ করলে আমার বাড়ির ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। এতে পরিবার নিয়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

হারবাং গুনা মেজু বৌদ্ধবিহার সভাপতি ক্যচিনঠে ডলি রাখাইন বলেন, হারবাং রাখাইন পাড়া একটি পশ্চাদপদ জনবসতি এলাকা। হারবাং ও বরইতলী ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এ সংযোগ সড়ক। রাখাইন পাড়ার উপর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাটির অবস্থা অত্যান্ত করুন। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় রাস্তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বর্তমানে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাচল করাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এই পাশ্চাতপদ জনপদকে রক্ষা করার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত মেরামত করার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নতুবা এই জনপদ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ বলেন, বন্যার পূর্বে হারবাং ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক কার্পেটিং, ব্রিজ, কালভার্ট, এইচবিবি রাস্তা, ফ্লাট সলিং, মাটির দ্বারা উন্নয়নের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হয়। এছাড়াও পরিষদের অর্থায়নে ৬ কোটি টাকার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। কিন্তু স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানির স্রোতে পড়ে গ্রামীণ প্রত্যেক সড়ক বেহালদশা পরিণত হয়। বর্তমানে বন্যার কারণে যে সব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দ্রুত সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন