রাখাইন রাজ্যে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ঢাকার আহ্বান  

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ রাখাইন রাজ্যে অবিলম্বে এবং শর্তহীনভাবে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে রাজি করাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানরা ব্যাপকভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ফলে সেখানে মারাত্মক মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের দ্বিতীয়বারের মতো ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, ‘সংকটের স্থায়ী সমাধানে আমরা কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অবিলম্বে পুরোপুরি ও শর্তহীনভাবে বাস্তবায়ন চাই।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমানের বাংলাদেশে প্রবেশের ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকট সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিতকরণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন।

এতে আফগানিস্তান, ব্রুনেই দারুসসালাম, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থ্যাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে পররাষ্ট্র সচিব এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি কূটনীতিকরা এ মানবিক সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের সহায়তায় আমাদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত এবং চীনও এ মানবিক সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি বলেন, কূটনীতিকরা তিন দশক ধরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

এর আগে, বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত তিন দশক ধরে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এর সাথে গত দু’সপ্তাহে আরো ৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারের ৭ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এদের আশ্রয় প্রদান বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় দ্বিপক্ষীয়ভাবে দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯২ সালে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। ১৯৯২ সালের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমার সমাজের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর যৌথ অভিযান, সমন্বিত টহল এবং যৌথ পরিদর্শনের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য মিয়ানমার এসব প্রস্তাবের কোন জবাব দেয়নি। বরং তারা রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মানবিক সংকট মোকাবেলায় জরুরি সহায়তাসহ বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান। ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক এবং মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন