রাঙামাটি জেলা পরিষদের পরিবর্তন যেকোনো সময়

hill-dev-board-sm1

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি:
তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জেলা পরিষদে যে কোন সময় রদবদল হতে পারে। কারা হচ্ছেন ৮ম তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য- এ নিয়ে তিন পার্বত্য জেলার অধীবাসীদের মনে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। দলীয় ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে পদ-পদবী ও ক্ষমতার জন্য চলছে ঠাণ্ডা লড়াই । ২০০৯ সালে ক্ষমতাশীল দলের মনোনীত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নিখিল কামার চাকমা ও সদস্য অংসুই প্রু চৌধূরীকে নিয়ে চলছে লবিং গ্রুপিং। এখন শুধু অপেক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ফ্যাক্স বার্তার। সরকারের পক্ষ থেকে আগামী জুন মাসের মধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নতুন মনোনয়ন তালিকা ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে এসে যাবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

দাবী উঠেছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা করে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন। তবে দীর্ঘ বছরে দাবী পুরণ হয়নি পার্বত্যবাসীর। আবেদনের প্রেক্ষিতে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সে সরকার দলীয় লোকদের দিয়ে একটি মনোনয়ন তালিকা ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে পাঠিয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর চেয়ারম্যানও সদস্য পদ সিলেকশন করে থাকে।

বিগত পাঁচ বছর ধরে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নিখিল কুমার চাকমা। আর সদস্য হিসেবে ছিলেন আর এক আওয়ামীলীগ নেতা অংসুই প্রু চৌধূরী। তবে এখন সদস্য হিসেবে নয় অংসুই প্রু চৌধুরীকে সরাসরি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করতে চায় জেলা আওয়ামীলীগের একটি অংশ। কিন্তু জেলা আওয়্মাীলীগের অন্য বিরাট একটি অংশ বর্তমান চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমাকে পূর্ণঃ নির্বাচিত করতে চায়। এই নিয়ে চলছে দলের মধ্যে মতবিরোধ। তবে চেয়ারম্যান পদে লবিং করছে অন্য আরো দু’জনের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- চিংকিউ রোয়াজা ও মংথোয়াই চিং।

পরিষদের সুত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে চার সদস্য ও একজন চেয়ারম্যান নিয়ে চলে আসছিল পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর কার্যক্রম। পার্বত্য জেলা পরিষদের আইনের ১৬ (ক) ধারায় অন্তবর্তীকালীন পরিষদের সদস্য সংখ্যা চেয়ারম্যানসহ ১১ জনে পরিবর্তনপূর্বক আইন পাশ হওয়ায় সদস্য  ৪ জনের পরির্বতে ১০জন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন বাঙালী যাদের একজন হিন্দু কিংবা বড়ুয়াকে সদস্য পদ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। বাকি আট জনের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ সাত সদস্যকে ক্ষৃদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের থেকে নির্বাচন করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি পরিষদের সদস্য পদে কোন দশ নতুন সদস্য ক্ষমতায় আসছে তা নিয়ে চলছে জোর লবিং। সদস্য হওয়ার জন্য জোর লবিং করছে অনেকেই। ইতিমধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- রাঙামাটি জেলা পরিষদের বাঙ্গালী সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুছা মাতব্বর, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সম্পাদক হাজী মোঃ কামাল উদ্দিন, আব্দুল মতিন, মনসুর আলী, জাকির হোসেন চৌধুরী, নজির আহমেদ, রফিক আহমেদ তালুকদার, জাহিদুল ইসলাম, কে.এম. জসিম উদ্দিন বাবুলের নাম শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সুনীল কান্তি দে, প্রধান শিক্ষক বাদল চন্দ্র দে, অরুন শীল, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমর দে, আশুতোষ বড়ুয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া জেলা পরিষদে নারী সদস্য হিসেবে লবিং করছে জেলা কৃষকলীগের সভাপতি অপহৃত অনিল চন্দ্র তংচংগ্যার স্ত্রী সবিতা চাকমা, পৌর কাউন্সিলর জেবুন্নেসা রহিম, রোকসানা আক্তার, জয়তুন নুর, কৃষ্ণা দেব।

চাকমা সম্প্রদায় থেকে বরকল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সন্তোষ চাকমা, বাঘাইছড়ি উপজেলার ক্যারল চাকমা, দানবীর চাকমা, প্রবর্তক চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, বিলাইছড়ি উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়সেন তংচংগ্যা, অংছা  প্রু মারমা, সুনীল কান্তি তংচংগ্যা, মনোজ বাহাদুর, ঊষাং মারমা নাম শোনা যাচ্ছে।

জানা গছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা পরিষদের মধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়িবান্দরবান জেলা পরিষদের কর্ম পরিধি ও ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের রয়েছে অসীম ক্ষমতা। ১৯৮৯ সনের ৯ জুলাই পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করা হয়। একজন চেয়ারম্যান ও ৩২জন সদসকে সরাসরি নির্বাচন করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় সরকার পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হলেও পরবর্তীতে চেয়ারম্যান এর উপমন্ত্রীর পদমর্য়াদা পরির্বতন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ মর্যাদায় নিয়ে আসা হয়। তবে পদমর্যাদার পরিবর্তন হলেও ক্ষমতার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর।

ইউএনডিপির সৌজন্য উপহার হিসেবে কোটি টাকার অত্যাধুনিক গাড়ি ছাড়াও চেয়ারম্যানের একাধিক গাড়ী, পুলিশ পাহারা, পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত ২৩টি সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাদের বদলিসহ চতুর্থ, তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ, বদলী, সব ক্ষমতাই চেয়ারম্যানের।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রাঙামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন