রামুতে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা

ramu-pic00

খালেদ হোসেন টাপু, রামু :

আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থী, বিএনপি এবং জামায়াতের একক প্রার্থী নিয়ে জমে উঠেছে কক্সবাজারের রামু  উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা হল রামু। বর্তমান ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮০১ জন। এদের মধ্যে ৭০ হাজার ৮৫২ জন পুরুষ ও ৬৮ হাজার ৯৪৯ জন মহিলা ভোটার রয়েছেন।

এবার চেয়ারম্যান পদে হেভিওয়েট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৬ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ২ জন প্রার্থীও রয়েছেন। ৫ জানুয়ারী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে অংশ নিতে পারেনি উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মানুষ। এবার উপজেলা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এই এলাকার নিভৃত গ্রামগুলো এখন লোক সমাগমে সরব হয়ে উঠেছে।

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী ও সমর্থকদের রাত-দিন অবিরাম ছুটে চলার যেন শেষ নেই। এবার কে হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ নিয়ে চলছে দলের তৃণমূল নেতা কর্মী ও ভোটারদের মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা। রামুতে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত, সহিংসতা, হানাহানি, মারামারি, পক্ষ-বিপক্ষে মামলা, মকদ্দমা না থাকলেও দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অপপ্রচার, দ্বিধাদ্বন্দ বিদ্যামান থাকায় প্রার্থীদের এসব সামলিয়ে এবার নির্বাচনে জয় পাওয়াটা কঠিন হয়ে উঠবে।         
   
এখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল (দোয়াত কলম), উপজেলা জামায়াতের আমীর ও উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান (ঘোড়া), উপজেলা বিএনপি সভাপতি আহ্মেদুল হক চৌধুরী (আনারস) ও খুনিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা সাংবাদিক আবদুল মাবুদ (কাপ পিরিচ) প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে লড়ছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুসরাত জাহান মুন্নী ও রামু উপজেলা বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াছমিন। এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজুল আলম (চশমা), বিএনপি সমর্থিত আলী হোসেন কোম্পানী (টিউবওয়েল), কৃতি খেলোয়াড় দিদারুল আলম প্রকাশ দিদার বলী (তালা), এস মোহাম্মদ হোসেন (টিয়াপাখি), আবুল কালাম সিকদার (উডোজাহাজ) ও আলহাজ্ব মৌলানা হাফেজ আবদুল হাই (মাইক) চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা।

প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা পোস্টার, লিফলেট-হ্যান্ডবিল নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। একাধিক প্রার্থী থাকায় নির্বাচন দারুণভাবে জমে উঠতে শুরু করেছে। নারী-পুরুষ সকলেই এখন নির্বাচনী হাওয়ায় ছুটে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র। কোন প্রার্থীর এখন আর অবসর নেই। নেই চোখে ঘুমও। তারা পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে প্রচারণার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতির গান তৈরী করে ভোটারদের আকর্ষণ করাসহ প্রার্থীরা নিজ নিজ যোগ্যতা প্রমাণে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে সাধারণ ভোটারদের মতামত এবার জেনে শুনে ভোট প্রদান করব, এলাকার উন্নয়ন চাই সে লক্ষে যে ব্যক্তি কাজ করবেন তাকেই নির্বাচিত করব।

আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল জানান, সর্বদলীয়ভাবে ভোট দিয়ে বিগত নির্বাচনে রামুবাসী বিপুল ভোটে তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলো। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে সেই প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করেছেন এখন। আগামীতে আবারো নির্বাচিত করলে রামুকে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন ।

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রামু উপজেলা বিএনপি সভাপতি আহ্মেদুল হক চৌধুরী জানান, রামুর মাটি, বিএনপির ঘাঁটি। রামুর প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে আসছেন। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগে সর্বস্তরের জনগনের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি জয়ী হলে উন্নয়ন বঞ্চিত রামুকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাবেন। 

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়মীলীগ নেতা সাংবাদিক আব্দুল মাবুদ জানান, তিনি নির্বাচিত হলে রামুকে একটি মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলবেন। অসহায় মানুষের পাশে থেকে দূর্ণীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন তিনি।

রামু সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ফজলুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান। তিনি বলেন, দূর্ণীতিমুক্ত ও গণমূখি প্রশাসন, সরকারের সহযোগিতায় এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, দলমত নির্বিশেষে সবার সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রামু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজুল আলম দীর্ঘদিন গ্রামে-গঞ্জে প্রচারনা ও গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। তিনি জানান, উপজেলাকে দূর্ণীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত করা এবং অবহেলিত জনপদের উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করাই তার মূল উদ্দেশ্য।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুসরাত জাহান মুন্নী জানান, দায়িত্ব পালনকালে বিগত ৫ বছর তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি ও নারীদের সুখে-দুখে পাশে ছিলেন। এবারও নির্বাচিত হলে রামুবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন।

রামু উপজেলা বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াছমিন জানান, বিগত নির্বাচনে হেরে গেলেও এবার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, নির্বাচিত হলে তিনি নারীদের কল্যাণে কাজ করবেন।      

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন