রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি থেকে শতাধিক রোহিঙ্গা ভোটার

fec-image

সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভোটার হওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত কড়াকড়ি আরোপ করলেও ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে পিছিয়ে নেই রোহিঙ্গারা। এত কড়াকড়ির পরেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কৌশলে ভোটার হওয়ার এবং আইডি কার্ড পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

কিছু সংখ্যক দালাল মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে এবং আইডি কার্ড পেতে ক্ষেত্রবিশেষে স্মার্ট কার্ড পেতেও তাদের সহযোগিতা করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়নে এ ধরনের একটি রোহিঙ্গা পল্লীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার বনবিভাগের জমি দখল করে গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গা বস্তি। আর এ সব রোহিঙ্গারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভোটার তালিকায় নাম তালিকাভুক্ত করেছে বলে জানা গেছে।

এদের অনেকেই স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করেছে এবং সরকারি জমি বন্দোবস্তিও নিয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়নের পানেরছড়া ওর্য়াডে বনবিভাগের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল রোহিঙ্গা বস্তি। এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে কেউ আগে এসেছে এবং কেউ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকানে সেনা নির্যাতনের পরে বাংলাদেশে পালিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা এখন আস্তে আস্তে ওই জায়গায় এসে রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে তুলেছে। তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় কৌশলে নাম লিখিয়েছে।

পানের ছরা বনবিটের সোজা পশ্চিম দিকে বনবিভাগের পাহাড়ে শতাধিক ঘর বাড়ির বস্তি গড়ে তুলেছে এ সব রোহিঙ্গারা। এখানে প্রতিদিন বাড়ছে বস্তির সংখ্যা। এখান থেকে রোহিঙ্গারা চালিয়ে যাচ্ছে চুরি ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত ভোটার তালিকায় দেখা গেছে দক্ষিণ মিঠাছড়ি শিয়া পাড়া রামু-কক্সবাজারের ঠিকানায় ১৭ নম্বর ভোটারের নাম লাল ফকির, পিতা-আলী আহম্মদ, মাতা নুর আহম্মদ তার ভোটার নং লেখা হয়েছে ২২১৬১৪৫০৪৪৪৬। তার জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৯৬৮ ইংরেজি। খবর নিয়ে জানা গেছে, সে একজন চিহ্নিত ডাকাত এবং রোহিঙ্গা আরএসও নেতা। তার বাড়ি আরাকানের বুচিডং এলাকায়। তার ৩ ছেলে এবং ৭ মেয়ে সন্তান রয়েছে। তারা সবাই এখন ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে।

ওই ভোটার তালিকায় লাল ফকিরের এক ছেলে নুরুল আলমের নাম উল্লেখ রয়েছে ১১০ নম্বর সিরিয়ালে। তার ভোটার নং লেখা হয়েছে ২২১৬১৪০০০০০২। তার জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৯৮৮ ইংরেজি। ঠিকানা লেখা হয়েছে লাল ফকির বাড়ি শিয়া পাড়া দক্ষিণ মিঠাছড়ি, রামু কক্সবাজার।

লাল ফকিরের অপর ছেলে আবু আহমদ পিতা ফকির মোহাম্মদ উল্লেখ রয়েছে ভোটার তালিকায় ০০৩ সিরিয়ালে। তার জন্ম দেখানো হয়েছে ৭/৮/১৯৮১ ইং, ভোটার নং ২২১৬১৪৫০৪৪০৭। ঠিকানা একই শিয়া পাড়া দক্ষিণ মিঠাছড়ি রামু কক্সবাজার।

একইভাবে ভোটার তালিকায় ০০১ সিরিয়ালের নুরুল আলম, পিতা আব্দুল জব্বার, ০০৪ সিরিয়ালের আবুল কালাম পিতা জহির আহমদ, ০০৫ সিরিয়ালের দিদার আলম পিতা ফকির আহমদ, ০০৯ সিরিয়ালের গোলো হোছন পিতা মোঃ কালু, ০১২ সিরয়ালের শামসুল আলম পিতা আব্দু জব্বার,০১৩ সিরিয়ালের নুরুল ইসলাম পিতা নজির হোছন, ০১৫ সিরিয়ালের আব্দু গফুর পিতা ফকির আহম্মদ, ০২০ সিরয়ালের আব্দুর রহিম পিতা ফকির মোহাম্মদ, ০২৫ সিরিয়ালের জহির আহমদ পিতা মোহাম্মদ কালু, ০২৬ সিরিয়ালে আব্দুল গফ্ফার পিতা ফকির মোহাম্মদ, ০২৮ সিরিয়ালের মুহাম্মুদুল হক পিতা মিয়া হোছন, ০২৯ সিরিয়ালের আব্দুর রহিম পিতা ফকির মোহাম্মদ, ০১৮ সিরিয়ালের আলী জুহার পিতা দরবেশ আলী, ০২৭ সিরিয়ালের আব্দুল জব্বার পিতা ফকির মোহাম্মদ, ১০৩ সিরিয়ালের নুরুল হক পিতা নুর মোহাম্মদ, ১১৩ সিরয়ালের জসীম উদ্দিন পিতা আলী জুহার, ১২৮ সিরিয়ালের ওয়াসিম মিয়া পিতা আলী জুহার, ১৩১ সিরিয়ালের হোছন আহমদ পিতা কবির আহমদ, ১৪০ সিরিয়ালের মনিরুল আলম পিতা ফকির আহমদ ও ১৪১ সিরিয়ালের নুর মোহাম্মদ পিতা ফকির আহমদ সবাই রোহিঙ্গা।

জানা গেছে, আরএসও নেতা ডাকাত লাল ফকিরের আত্মীয় স্বজন পরিচয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গোপনে এরা দক্ষিণ মিঠাছড়ির শিয়া পাহাড়ে এসে বসতি গড়ে তুলেছে ও জনপ্রতিনিধিদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তারা ভোটার হয়েছে।

খবর নিয়ে আরো জানা গেছে, এ সব রোহিঙ্গারা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও কতিপয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় সনদ নিয়ে ভোটার হয়েছে। এলাকাবাসী এসব রোহিঙ্গা ডাকাতদের এনআইডি বাতিল করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ছে।

বিষয়টি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ভোটার, রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা পল্লী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন