“পাহাড় এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ওই এলাকার প্রচুর আম ও আনারস বাগান আছে। বাগান দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু করার কিছুই নেই। আমরা কিনতে চাইলেও কিনতে পারব না। কেননা রাস্তায় বড় বড় গর্ত আছে, রাস্তাটি ঠিক করে না দেওয়ার পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ। তাই পণ্য নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না- পাইকারি ব্যবসায়ী”

রোয়াংছড়িতে এখনো রাস্তায় কেএনএফ’র মৃত্যুফাঁদ! বিপাকে কৃষিপণ্য ও সাধারণ মানুষ

খুঁড়া গর্তের সমস্যায় কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো সময়মতো বিক্রয় করতে না পারায় কাঁচামাল পঁচে যাচ্ছে। এতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে রুমা থেকে রোনিন পাড়া যাওয়ার প্রধান সংযোগ সড়কটিতে গর্ত খুঁড়ে যানবাহন চলাচল ও স্থানীয় এলাকাবাসীর যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মৃতুফাঁদে পরিণত করেছে কেএনএফ এর একটি সশস্ত্র দল। উপজেলার সদর ইউপির ক্যাপলং পাড়া সংলগ্ন এলাকায় এ হীন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে।

সড়কে সশস্ত্র কেএনএফের খুঁড়া গর্তের প্রায় এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের ব্যবস্থা না করায় এলাকাবাসী ও কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। রোনিন পাড়া ও পাইক্ষ্যং পাড়া এলাকা থেকে রোয়াংছড়ি সদর আসতে প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে ও উঁচুনিচু পাহাড় ডিঙিয়ে আসতে হয়। যান চলাচল করতে না পারায় সাধারণ মানুষের চলাচলের ভোগান্তি চরমে ঠেকেছে। রাস্তাটি জরুরি মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। কারণ খুঁড়া গর্তের সমস্যায় কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো সময়মতো বিক্রয় করতে না পারায় কাঁচামাল পঁচে যাচ্ছে। এতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ফলে উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলোর ক্ষতির কারণে লাখ লাখ টাকা লস গুণতে হবে।

খামতান পাড়া, ক্যাপ্লাং পাড়া, পাইক্ষ্যং পাড়া ও রোনিন পাড়া ওই এলাকার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রচুর ফলদ বাগান রয়েছে এখানে। বর্তমানে উৎপাদিত ফলদ বাগানের ফলিত ফলগুলো পরিপক্ক হওয়ায় কেনাবেচা করা উপযুক্ত সময়ে বিক্রি করতে না পারলে লসের মুখে পড়বে কৃষকেরা। এতে বিপুল ক্ষতির সম্মুখিন হবেন তারা।

স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, শনিবার (২৪ জুন) বিকেল ৩টার দিকে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সদর ইউপির ৬নং ওয়ার্ড ক্যাপলং পাড়া সংলগ্ন দেবতা পাহাড় তিন রাস্তার মোড়ে ১০ থেকে ১২ সদস্য বিশিষ্ট কেএনএফ এর একটি সশস্ত্র দল আগমন করে। পরে দলটি ক্যাপলং পাড়া থেকে পাইক্ষ্যং পাড়া যাওয়ার পথে চাপ প্রয়োগ করে স্থানীয় গরিব কৃষকদের দিয়ে ব্রিকসলিং রাস্তার মাঝ বরাবর একটি গর্ত খোঁড়ে, যেন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মূলত এই রাস্তাটি দিয়ে মোটরসাইকেল ব্যতীত অন্য যানবাহন খুবই কম চলাচল করে থাকে বলে জানায় পাড়াবাসী। এছাড়া শুধু সেনাবাহিনীর টহল পিকআপ চলাচলের ক্ষেত্রে রাস্তাটি ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে রাস্তায় গর্ত থাকায় এখন পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ফলে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য কলা, আম ও রসেভরা মিষ্টি আনারস ফলগুলো বেচাকেনা করতে সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে পাহাড়ের বাগানের হাজার হাজার টন আম সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় গাছ থেকে পড়ে ধীরে ধীরে পঁচে যাচ্ছে। রাস্তাটি জরুরিভাবে মেরামত না করলে আরো ক্ষতিগুণতে হবে প্রান্তিক কৃষকের।

এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রোয়াংছড়ি উপজেলায় কেএনএফ এর কিছু সশস্ত্র দল প্রায়শই উপজেলার বিভিন্ন বম পাড়া ও তার আশপাশের এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদা উত্তোলন, শ্রমিক অপহরণসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লক্ষ্যে ঐ এলাকায় অস্থায়ীভাবে অবস্থান করে থাকে। প্রত্যন্ত এলাকায় সরকারিভাবে নির্মিত এই রাস্তাটি বসবাসকারী জনসাধারণের দৈনন্দিন যাওয়া-আসা ও উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার হতো। কেএনএফ এর এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে একদিকে যেমন সরকারি সম্পদ নস্ট হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় বসবাসকারী জনসাধারণের জীবনমানের উন্নয়নে নেমে আসছে কালো ছাঁয়া।

আম ব্যাপারি মো. কবির হোসেন ও জামাল উদ্দিনসহ আরো অনেকে বলেন, পাহাড় এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ওই এলাকার প্রচুর আম ও আনারস বাগান আছে। বাগান দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু করার কিছুই নেই। আমরা কিনতে চাইলেও কিনতে পারব না। কেননা রাস্তায় বড় বড় গর্ত আছে, রাস্তাটি ঠিক করে না দেওয়ার পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ। তাই পণ্য নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। প্রাথমিকভাবে রাস্তাটি মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

১নং রোয়াংছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লাঅং মারমা বলেন, পাইক্ষ্যং পাড়া যাওয়ার রাস্তাটি খারাপ হওয়ায় বর্তমানে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট থেকে রাস্তাটি সংস্কার না করে পিচ ঢালাই রোড নির্মাণ করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উন্নয়ন বোর্ডকে শিগগরই কাজ শুরু করা কথা বলা হয়েছে।

এব্যাপারে জানতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাদকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন