স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৬তম বৈঠক শেষে বেনজীর আহমেদ

‘রোহিঙ্গা এবং তাদের নতুন সন্তান জন্ম নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন’

fec-image

কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৬তম বৈঠক শেষে সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি বলেছেন, ‘১২ লাখ রোহিঙ্গা এবং তাদের নতুন সন্তান জন্ম হচ্ছে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এদেরকে কতো তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত, উদ্বিগ্ন। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে আরো উন্নত করা যায়, যাতে কোন অঘটন না ঘটে, ক্রাইম এলাকা সরেজমিন দেখেছি।’

রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায়ই ঘটছে গোলাগুলি ও হত্যাকাণ্ড। টেকনাফে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছে একের পর এক। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সংঘর্ষ, গোলাগুলির কারণে উখিয়া ও টেকনাফের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজারেই বসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালান, দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে উন্নতি করা যায়, মূলত সেবিষয়ে বৈঠক হয়েছে। কিছু প্রস্তাবনা এসেছে। বিস্তারিত আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমস্ত বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ টেনে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। প্রক্রিয়া অব্যাহত। প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরে বেনজীর আহমেদ এমপি বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে বিভিন্ন বাহিনীর কথা আমরা শুনি। বিভিন্ন গ্রুপ সেখানে আছে। বর্ডার এলাকা হিসেবে কিছুটা প্রভাব পড়ে। সে ব্যাপারে সীমান্তে দায়িত্ব পালনকারী বিজিবি, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সতর্ক। সবার সতর্ক অবস্থানের কারণে অপরাধীরা কোন জায়গায় ছাড় পাচ্ছে না। যখন যাকে যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে কক্সবাজারের মাদক কারবারিদের তালিকা প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, ‘তালিকা হলেই যে অপরাধী হয়ে যায়, তা না। সেটা জাস্টিফাই করে দেখি। আমরা অনেক ইনফরমেশন পেয়ে থাকি। আমাদের কাছে তালিকা এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখব। আসলেই অপরাধী হলে আইনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অপহরণের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব খবর নিয়েছি। খুন, ডাকাতি ও অপহরণের সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। সব অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপির সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সংসদ সদস্য মো. আফছারুল আমীন, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পীর ফজলুর রহমান, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, বেগম রুমানা আলী, নূর মোহাম্মদ, সামছুল আলম দুদু, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে দুই দিনের সফরে কক্সবাজার আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

ঢাকা থেকে বিমানযোগে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছালে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিতসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাকে বরণ করেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) মন্ত্রী শাহপরীরদ্বীপ সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। একই দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ৩৪ বিজিবির অধীন বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের ফ্রেন্ডশিপ লালব্রিজ এলাকা পরিদর্শন করেন।

রবিবার (১৫ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৬ তম বৈঠকে অংশ নেন। সন্ধ্যায় কমিটির সদস্যসহ কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন মন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন