ঈদ জামাতে দেশে ফেরার আকুতি রোহিঙ্গাদের

fec-image

নিপীড়নের মুখে দেশহারা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে একসঙ্গে পড়েছেন ঈদের নামাজ। নামাজ শেষে মোনাজাতে আকুতি জানিয়েছেন নিরাপদে স্বদেশে ফেরার।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। সব মিলিয়ে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের বসবাস। বাংলাদেশে আশ্রয়রত সাড়ে ৬ বছরের বেশি সময় ধরে আশ্রয়রত এসব রোহিঙ্গারা বছরে দুটি করে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহা) ১৪টি ঈদ কাটিয়েছেন এই ক্যাম্পে।

রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পে ৩ হাজারের মতো মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানরা।

সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তাই প্রতিটি বসতি থেকে দলে দলে ঈদের নামাজ আদায়ে ময়দানে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। ঠিক ৮টায় একযোগে ক্যাম্পে শুরু হয় ঈদ জামাত।

নামাজ শেষে শুরু হয় মোনাজাত, চলে দীর্ঘক্ষণ। মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রোহিঙ্গারা। তারা স্বদেশে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি ফিলিস্তিন মুসলমানদের জন্যও দোয়া করেন।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও প্রত্যাবাসন এখনও শুরু হয়নি। এরমধ্যে মিয়ানমারে শুরু হয়েছে গৃহযুদ্ধ। এপারে থেকে নিজ দেশে সংঘাত আর সহিংসতার খবর পাচ্ছে রোহিঙ্গারা।

বৃহস্পতিবার উখিয়ার বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতরে উৎসবের আমেজ কিছুটা বেশি। শিশুরা সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে।

রোহিঙ্গারা বলছেন, ঈদের সবচেয়ে বড় জামাতটি হয়েছে উখিয়ার বালুখালীর ৮ নম্বর ক্যাম্পে।

ওই ক্যাম্পের চারপাশে রোহিঙ্গাদের বসতি, ঠিক বসতির মাঝখানে খোলা মাঠ। এই খোলা মাঠে করা হয়েছে ঈদের নামাজ আদায়ের প্যান্ডেল। বাঁশ আর রঙিন কাগজ। সুতার সঙ্গে মাঝে মাঝে টাঙানো হয়েছে ফুল আর বেলুন। এভাবে সেজেছে ক্যাম্পের প্রতিটি ঈদ নামাজ আদায়ের ময়দান।

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা বশর বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরেছি, তার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

“তবে আমরা সব চেয়ে বেশি খুশি হতাম যদি নিজ দেশ মিয়ানমারে ঈদ উদযাপন করতে পারতাম। আমাদের এখন একমাত্র স্বপ্ন মিয়ানমারে ঈদের নামাজ আদায় করা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসে আহ্বান জানাচ্ছি।”

লম্বাশিয়া ক্যাম্প-১ এর বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, “আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারি না। কারণ সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না।

“এই জন্য শিশুদের মাঝে আনন্দ দেখা গেলেও আমাদের কোনও আনন্দ নেই। তাই ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশেষ করে নিজ ভূমিতে অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারবো সেই প্রার্থনাও করা হয়েছে।”

কুতুপালং ক্যাম্প-ডি-৫ এর বাসিন্দা বাদশা মিয়া শরণার্থী জীবনের বেদনা তুলে ধরে বলেন, “ঈদের দিন গ্রামের লোকজন ঘরে এসে সেমাই ও চালের রুটির সঙ্গে রান্না করা গরুর মাংস খেয়েছে। আর এখন সেমাইর জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। এটা বড়ই লজ্জার ব্যাপার।”

স্বদেশভূমিতে সত্যিই কি ফেরা হবে, এমন সংশয় এখনও গভীর রোহিঙ্গাদের মনে।

“এই দেশে বোঝা হয়ে আর কত দিন থাকতে হবে? জানি না, আবার কখন ফিরে পাব কি না হারানো ঈদের সুখের দিনগুলো,” বলেন বাদশা।

ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন বলছে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঈদে উপলক্ষে তারা নজরদারি রেখেছেন।

উখিয়ার ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর বলেন, “ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেছেন। তবে কেউ যাতে ক্যাম্পের বাইরে না যান, সেজন্য মাঝিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকেও নজরদারি রাখা হয়েছে।”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন