রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার : সব খুনের নেপথ্যে মিয়ানমারের মিশন

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধুরছড়া লাগোয়া ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনের কাঁটাতারের বাইরে কালমারছড়া এলাকা থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে উখিয়া থানার পুলিশ।

গত শনিবার (২২ জুলাই) রাতে গহিন পাহাড় থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া মরদেহের তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় পাওয়া যায়নি।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ছিদ্দিক নামে এক ব্যক্তি মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে মাটি চাপা দেয়া লাশের হাত দেখতে পেয়ে উখিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তিনি আরো জানান, লাশটি সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে জেলা পুলিশের তথ্যমতে, শুধু চলতি বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন হয়েছেন অর্ধশত। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৫৭। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮১ জন খুন হয়েছেন। অপরদিকে গত সাড়ে সাত মাসে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করেছে ৭৯ জন স্থানীয় বাসিন্দাকে। তার মধ্যে অপহৃত ৬ জন খুনের শিকার হয়েছেন। অপহরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৯টি মামলা হয়েছে।

গত সাত মাসে খুন হওয়া অর্ধশতের মধ্যে ৩২ জনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনায় জড়িত নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক। তারা নানাভাবে রোহিঙ্গাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হতে কাজ করেছেন। শুধু গত এক বছরে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ১৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব খুনের নেপথ্যে মিয়ানমারের মিশন রয়েছে বলে দাবি করেন সরকারের একাধিক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ৩০টির বেশি সশস্ত্রগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। একই সঙ্গে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে। গত এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৩০ লাখের বেশি ইয়াবা ও ৩০ কেজি আইসসহ ৮০০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। আর এই মাদক নিয়ে ১৩৬ রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনায় ১৮ মামলায় ২৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর বাইরেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আলোচনা ঠেকাতে অনেক ক্যাম্পে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ২২২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে

৬৩টি নাশকতামূলক বা ইচ্ছা করে লাগানো হয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের প্রধান লক্ষ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা তৈরি করা এবং বিভাজন বাড়ানো। তাদের লক্ষ্য প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে খুন করা। যেমনটি হয়েছিল ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। ওই দিন রোহিঙ্গাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা মহিব উল্লাহকে হত্যা করে আরসা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপর সশস্ত্রগোষ্ঠীর ১১টির নাম এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১টি দলের মধ্যে আরসা সক্রিয় রয়েছে উখিয়া, বালুখালী, পালংখালী ও হোয়াইক্যং ক্যাম্পে। আরসার হয়ে অস্ত্র সংগ্রহে দায়িত্ব পালন করে সাতটি দল।

সূত্র: ভোরের কাগজ

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ক্যাম্প, মিয়ানমারের মিশন, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন