রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠক আজ

fec-image

পাইলট প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মিয়ানমারের দিক থেকেও সম্মতি থাকায় ইয়াঙ্গুনে আজ বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। তবে মধ্যস্থতাকারী তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ চীনের কোনো প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন কিনা- সে সম্পর্কে ঢাকার তরফে এখনো খোলাসা করা হয়নি।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। পরিচয় যাচাই-বাছাইকৃত ওই রোহিঙ্গাদের গ্রহণে অনাপত্তি রয়েছে মিয়ানমারের।

যদিও রাখাইনে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দুনিয়ার তরফে উদ্বেগ রয়েছে। আজকের বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে জানিয়ে সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যাবাসনের এটি তৃতীয় চেষ্টা। অতীতে প্রত্যাবাসনের দু’দফা চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কারণে এবার ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি নেয়া হয়েছে। এবার আগ বাড়িয়ে প্রত্যাবাসনের দিন-তারিখ ঘোষণা হবে না। বাংলাদেশ-মিয়ানমার এ বিষয়ে একমত। তাছাড়া মধ্যস্থতায় থাকা চীনও তা-ই চাইছে।

সব মিলিয়ে নীরবে সম্পূর্ণ নতুন এক স্ট্র্যাটেজিতে এগুচ্ছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

সব ঠিক থাকলে নির্বাচনের আগে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানো হবে। কিন্তু পশ্চিমা উদ্বেগ নিরসন হবে কীভাবে? এমন প্রশ্নে সেগুনবাগিচার ওই কর্মকর্তা বলেন, চীনের মধ্যস্থতার বিষয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার অবজারভেশন বা সতর্ক পর্যবেক্ষণ রয়েছে, কিন্তু তারা আদতে প্রত্যাবাসন বিরোধী নয়। কারণ বাস্তুচ্যুত ওই জনগোষ্ঠীর ভরণপোষণে বাংলাদেশের বাজেটের বাইরেও তাদের কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। এবং দিনে দিনে রোহিঙ্গা সংকট জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।

পূর্ণ নিরাপত্তা এবং ন্যূনতম মর্যাদা নিশ্চিত করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে পারলে এবং প্রত্যাবাসিতদের দেখভালে রাখাইনে শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ জাতিসংঘ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা গেলেই উদ্বেগ কমে আসবে। হয়তো পশ্চিমারা সেটাই দেখতে চায়। ওই কর্মকর্তা জানান, অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় হিসাব-নিকাশ কষেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে ঢাকা। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উদ্বিগ্ন সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে খোলা মনে সব শেয়ার করছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা।

উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো- সবাইকে আস্থায় রেখে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা। আজকের বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরু করার সময় ক্ষণ নিয়ে আলোচনা হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বেচ্ছায় ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের আস্থা ধরে রাখতে বৈঠকে জোর দেবে ঢাকা। বৈঠকে অংশ নিতে একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ইয়াঙ্গুন গেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির। আজকের বৈঠক সফল হলে ভেরিফাইড রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে মিয়ানমার সরকারের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই কক্সবাজার সফর করবে। রোহিঙ্গাদের মনোবল বৃদ্ধি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে তাদের ব্রিফ করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, পাইলট প্রকল্পের আওতায় মোট ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন করার জন্য তালিকা চূড়ান্ত হয়ে আছে। এদের মধ্য থেকে প্রথম ব্যাচে হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে একই পরিবার এবং এলাকার রোহিঙ্গাদের পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। স্মরণ করা যায়, চীনের মধ্যস্থতায় গত ৩ বছর ধরে মন্ত্রী-সচিব লেভেলে সিরিজ বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সব বৈঠকেই মধ্যস্থতাকারী তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ চীনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন