রোহিঙ্গা বলায় মানা: পোপ কি শুনবেন?

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমার সফরের সময় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ না করতে পোপ ফ্রান্সিসকে মানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইয়াঙ্গুনের ক্যাথলিক আর্চবিশপের দায়িত্ব পালনকারী কার্ডিনাল চার্লস মং বো।

দেশটির ক্ষমতাসীন দল এনএলডির নেত্রী ও ডি ফ্যাক্টো সরকারপ্রধান অং সান সুচি এবং তাদের সেনাবাহিনীর ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণে আপত্তি থাকায় পোপ ফ্রান্সিসকে তা এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের এই কার্ডিনাল।

আদি জাগিগোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের পরিচয় অস্বীকার করতে এবং বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে মিয়ানমারে যাওয়া ‘অবৈধ বাঙালি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াসে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী তাদের ‘রোহিঙ্গা’ নামে পরিচয় দেয় না। দেশটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সরকারি তালিকায়ও রোহিঙ্গারা নেই। এভাবে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার হরণ করেছে মিয়ানমারের সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র।

রোহিঙ্গাদের যদি রোহিঙ্গা বলা না হয়, তাহলে তাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সফল হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মিয়ানমারের ইচ্ছামতো ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসও কি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করবেন না? এটি এখন বড় প্রশ্ন।

গত আগস্ট মাসে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে গড়ে তোলা আশ্রয়শিবির এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছায় মিয়ানমার কাজ করলেও তা কবে নাগাদ কার্যকর ও শেষ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে গেছে। রোহিঙ্গাদের বাঁচা-মরার এই তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে পোপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য তিনি কী বলবেন, শোনার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত এই জাতিগোষ্ঠীর লোকজন।

রোহিঙ্গাদের ফিরতে হবে : প্যাট্রিক ডি’রোজারিও

বাংলাদেশে প্রধান ক্যাথলিক ধর্মগুরু কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেছেন, পোপ ফ্রান্সিসের এই সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ প্রসারিত হবে। তিনি আরো বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ামনারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও উভয় দেশে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি এখনো বিস্ফোরণোন্মুখ এবং সমাধানও কষ্টসাধ্য।

পোপের সফর সামনে রেখে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল ডি’রোজারিও বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।’ তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিই চায় এবং পোপ ফ্রান্সিসের সফর উপলক্ষে অনেকের মন ও হৃদয় এ জন্য প্রস্তুত হবে।’

সূত্র: রাইজিংবিডি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন