শাহপরীরদ্বীপ ভূ-খন্ড রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি কামনা

 মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ:

ভূ-খন্ড রক্ষা ও শত শত পরিবারকে উদ্বাস্থ হতে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন শাহপরীরদ্বীপবাসী। গত দেড় বছর ধরে বেড়ীবাঁধের ভয়াবহ ভাঙ্গন ও শাহপরীরদ্বীপ-টেকনাফ একমাত্র সড়কটি বিধ্বস্থ হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ, লবন ও কৃষি চাষাবাদ বন্ধ থাকায় দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে শাহপরীরদ্বীপের ৫০ হাজার বাসিন্দা। ইতিমধ্যে সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে মূল ভূমি গিলে খেয়েছে সাগর, ভেসে গেছে ঘরবাড়ী, মসজিদ ও ভেঙ্গে গেছে সড়ক পথ এবং উদ্বাস্ত হয়েছে ৪০/৫০ টি পরিবার। ত্রি-মূখী ভাঙ্গনের ফলে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ অস্তিত্ব বিলীনের পথে। দেশের ভূখন্ড থেকে ক্রমেই মূছে যাচ্ছে ঐতিহাসিক এই জনপদ।

একদিকে নাফনদী অপর দু’দিকে বঙ্গোপসাগর। পশ্চিম, দক্ষিন ও পূর্বদিক থেকে পানির তোড়ে ইতিমধ্যে বেড়ীবাঁধ ভাঙ্গনের ফলে অনেক বাড়ী-ঘর, মসজিদ ও সড়ক বিধ্বস্থ হয়ে সাগরে বিলীন হয়ে গিয়েছে। আতংক, উৎকন্ঠায় ও দিশেহারা হয়ে বাপ-দাদার ভিটে সম্পত্তি ছেড়ে দিক-বিদিক নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে দ্বীপের মানুষ। এছাড়া সাগরের পানিতে নতুনভাবে প্লাবিত হচ্ছে সাবরাং ইউনিয়নের বেশ কয়টি এলাকা। ফলে আতংকে দিন কাটাচ্ছে শাহপরীরদ্বীপ-সাবরাংয়ের সাধারন মানুষ। সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান, শাহপরীরদ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মাষ্টার জাহিদ হোসেন ও শাহপরীরদ্বীপ আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক ইউনিয়ন শাখার সভাপতি আলহাজ্ব সোনা আলী এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বারকলিপি দিয়েছেন।

এতে বলা হয়, পর্যটন সামুদ্রিক মাছ, লবন, পান-সুপারী ও কৃষিতে অপার সম্ভাবনাময় শাহপরীরদ্বীপ। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের ১৩ হাজার ভোটারের বসবাস এই জনপদে মানুষের প্রধান পেশা সাগরে মৎস্য শিকার ও চাষাবাদ। প্রতি বছর এই শাহপরীরদ্বীপ থেকে বিভিন্ন খাতে রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হয় শতশত কোটি টাকা। প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকা সামুদ্রিক মাছ সরবরাহ করা হয় সারাদেশে। তাছাড়া মাঠে উৎপাদিত লবন পান-সুপারি ও গবাদি পশু আমদানীর করিডোরসহ সব মিলিয়ে আয় হয় ৩০০ কোটি টাকা। এমনই একটি জনপদ শাহপরীরদ্বীপের ৮ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ সাগরে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ভিটে বাড়ীসহ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার। সহায় সম্বলহীন মানুষের আর্তনাদে প্রকম্পিত হচ্ছে আকাশ-বাতাস। দিন দিন বাড়ছে বেড়ীবাঁধের ভাঙ্গন।

পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় জনপদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর সাগর-নদী বিধৌত এই শাহপরীরদ্বীপের সাথে সেন্টমার্টিনদ্বীপের দূরত্ব কম হওয়ায় পর্যটকদের ভ্রমন সুবিধার্থে শাহপরীরদ্বীপে নির্মিত হয়েছে জেটি। কিন্তু সাগরের জোয়ারের আঘাতে টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ একমাত্র সড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা বিধ্বস্থ হয়ে সড়ক যোগাযোগ গত দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন পর্যটন সম্ভাবনাকে মলিন করেছে, অন্যদিকে শাহপরীরদ্বীপ বাসিন্দাদের যাতায়াত ব্যবস্থাকে করেছে দূর্র্বিসহ। প্রধান সড়কটি বিলীন হওয়ায় সাগরের জোয়ারের পানিতে শত শত একর ফসলী জমি একাকার থাকে। শাহপরীরদ্বীপ বাসিন্দাদের টেকনাফের সাথে যোগাযোগ করতে হচ্ছে নৌকায় করে। এতে নিয়মিত যাতায়াত, রোগী ও গর্ভবতীদের হাসপাতালে নেয়া, স্কুল কলেজের যাতায়াত, মৎস্য ও কৃষি উৎপাদিত পণ্য পরিবহন, একমাত্র করিডোর থেকে গবাদি পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন ও দূর্যোগকালীন সময়ে নিরাপদ আশ্রয় স্থলে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে।

১৯৯৬ সনে আওয়ামীলীগ সরকার আমলেই শাহপরীরদ্বীপে বেড়ীবাঁধ নির্মিত হওয়ায় শতশত একর ভূমি রক্ষা পেয়েছিল। তাঁরা টেকসই শাহপরীরদ্বীপ বেড়ীবাঁধ নির্মাণ ও শাহপরীরদ্বীপ টেকনাফ সড়কটি জরুরী ভিত্তিতে পূণঃনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর সূ-দৃষ্টি কামনা করেছেন। সরেজমিন শাহপরীরদ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, সাগরের লবনাক্ত জোয়ারের পানি ঢুকে ডুবে একাকার। প্রধান সড়কটি ভেঙ্গে গিয়ে মূল ভূখন্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন রয়েছে দ্বীপটি এবং পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় তলিয়ে আছে ফসলি জমি, পুকুর ও অধিকাংশ বাড়ী-ঘর। দূর্ভোগ আর দূঃচিন্তায় দেখা গেছে দ্বীপবাসীকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এ অবস্থা এক সপ্তাহ বা এক মাস নয়। গত বছর বর্ষা থেকে চলে আসছে তাদের এ দূর্ভোগ ও কষ্টের দিন। সাগরের জোয়ারের পানিতে শাহপরীরদ্বীপ ও সাবরাং এর উপকুলবর্তী গ্রাম উত্তর-দক্ষিন জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ঘোলাপাড়া, উত্তর পাড়া, ডাঙ্গারপাড়া, কচুবনিয়া, হারিয়াখালী, লাফারঘোনা, পুর্ব নয়াপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে বসতঘর, পানবরজ, ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

এছাড়া শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়ার বেড়ীবাঁধের বেশ কয়টি অংশ নতুনভাবে ভেঙ্গে যাওয়ায় দ্বীপবাসীর আতংক বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে দক্ষিন অংশের বেশ কয়টি বসত-বাড়ী বিধ্বস্থ হয়ে নদীর গর্ভে চলে গিয়াছে। একমাত্র জামে মসজিদটি পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। ফলে দিন রাত উৎকন্ঠায় দিন কাঠাচ্ছেন সাধারন মানুষ। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেক দিন ও রাতে ২ বার জোয়ারের পানিতে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, মাঝরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ঘোলাপাড়া, জালিয়াপাড়াসহ, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক ডুবে আছে। প্রয়োজনের সাপেক্ষে শাহপরীরদ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা নৌকা নিয়ে সড়ক পারাপার করছে। জোয়ারের পানিতে শাহপরীরদ্বীপ নিয়মিত প্লাাবিত হয়ে শত শত বাড়ীঘর , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্টান ধ্বংস হচ্ছে। অবহেলার কারণে হয়ত একদিন ঘোলার চর বদর মোকামের মতো দেশের মানচিত্র হতে মুছে যেতে পারে শাহপরীর দ্বীপের ভূ-খন্ড।

উল্লেখ্য, গত প্রায় দেড় বছর শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দাগণ সভা-সমাবেশ, টেকনাফ ও কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান করে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “শাহপরীরদ্বীপ ভূ-খন্ড রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি কামনা”

  1. প্রধানমন্ত্রীর উচিত একটা পদক্ষেপ নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন