শোকে স্তব্ধ লিবিয়া যেন মৃত্যুপুরী, মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার

fec-image

শোকে স্তব্ধ লিবিয়া। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০০। দেরনা অঞ্চলে মৃতদেহ উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তামের রমজান বলেছেন, ‘মৃতের সংখ্যা বিশাল এবং কয়েক হাজারে পৌঁছতে পারে।

গত রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে দুটি বাঁধ ভেঙে দেশটির দেরনা অঞ্চল ভেসে যায়। জরুরি পরিষেবাগুলো জানিয়েছে, ৫ থেকে ৬ হাজারের বেশি লোক নিখোঁজ এবং প্রায় ৭ হাজার আহত হয়েছে। বহু মানুষ দেরনায় শোক প্রকাশ করছে। কেউ কেউ পরিবার হারিয়ে বিলাপ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা সালেম জানান, তিনি তার ৩০ জন আত্মীয়কে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষ তখন ঘুমিয়ে ছিল। কেউ নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না।’

অন্য এক বাসিন্দা রাজা সসি বলেন, তিনি, তার স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে বেঁচে আছেন; কিন্তু তার পরিবারের বাকিরা মারা গেছে।

ওয়ালিদ আব্দুলাতি নামে একজন বলেছেন, ‘আমরা একজন বা দুইজন মারা যাওয়ার কথা বলছি না। প্রতিটি পরিবারের অন্তত ১০ জন করে সদস্য মারা গেছে।’ ত্রিপোলিতে তার বেশির ভাগ আত্মীয় মারা গেছে বা নিখোঁজ আছে।

লিবিয়ার পূর্ব দিকে বিধ্বংসী ঝড় আঘাত হানার আগেই অনেকে বাস্তুচ্যুত ছিলেন। কারণ দেশটিতে কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতের ফলে এলাকাটিতে ইতিমধ্যেই ৪৬ হাজারের বেশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের আবাসস্থল ছিল।

ইউএনএইচসিআর-এর একজন মুখপাত্র রুলা আমিনের মতে, ‘প্রাথমিক অনুমান বলছে, আরো ৬০ হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।’

আমিন আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা বেনগাজিতে প্রয়োজনীয় সব কিছু পাঠানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে। দেরনায় টেলিযোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালগুলো অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। আমাদের সেবা দিতেও সমস্যা হচ্ছে। একটি দুর্যোগ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’

এর আগে পূর্ব লিবিয়ার স্বঘোষিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ওসামা হামাদ জানিয়েছিলেন, বন্যা ও ঝড়ে অন্তত দুই হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া এখনো নিখোঁজ আছে হাজার হাজার মানুষ। দেরনাকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, পানির স্রোতে পুরো এলাকা সমুদ্রে ভেসে গেছে। লিবিয়ায় উদ্ধারকারী দল সাগর থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করতে হিমশিম খাচ্ছে।

গত সপ্তাহে গ্রিসে আঘাত হানার পর ঝড় ড্যানিয়েল রবিবার ভূমধ্যসাগরের ওপর দিয়ে চলে যায়। অতি শক্তিশালী নিম্নচাপের ফলে ভারি বর্ষণে গেল সপ্তাহে গ্রিসেও ভয়াবহ বন্যা হয়। এ ধরনের আবহাওয়া গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়, আটলান্টিকের হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় টাইফুনের মতো। ড্যানিয়েলের আঘাতে দেরনায় দুটি বাঁধ এবং চারটি সেতু ভেঙে পড়ে। ফলে শহরের বেশির ভাগ অংশ ডুবে যায়। রেড ক্রিসেন্ট বলছে, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।

কিছু দেশ থেকে সাহায্য আসতে শুরু করেছে লিবিয়ায়। কিন্তু লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। কারণ দেশটি দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। লিবিয়া রাজনৈতিকভাবে পূর্ব এবং পশ্চিম দুই ভাগে বিভক্ত। ২০১১ সালের বিদ্রোহে দীর্ঘ সময়ের শাসক গাদ্দাফির পতন এবং পরে নিহত হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের অভাব রয়েছে।

লিবিয়ার পূর্ব দিকের সরকার হিশাম চকিউয়াত বলেছেন, ‘আমি যা দেখেছি তাতে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এটা ঠিক সুনামির মতো।’ তিনি বিবিসি নিউজআওয়ারকে বলেছেন, দেরনার দক্ষিণে একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে শহরের বড় অংশ সমুদ্রে টেনে নিয়ে গেছে। বিশাল এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। এলাকাটির প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় শুধু বাড়ছে।’

সূত্র : আলজাজিরা

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মৃত, লিবিয়া, শোক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন