সিনহা হত্যার রায় কাল, প্রদীপের সর্বোচ্চ শাস্তি চায় রাষ্ট্র ও বাদিপক্ষ

fec-image

বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি। কক্সবাজার আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ। মাস্টারমাউন্ড প্রদীপের কী শাস্তি হচ্ছে তা দেখার আগ্রহ সবার। কৌতুহল রয়েছে সাধারণ মানুষের। রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তা প্রমাণিত। বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে। এতে ন্যায় বিচার পাবে সিনহার পরিবার।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, ‘সিনহাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। সেটা আদালতে স্পষ্টভাবে, সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ময়নাতদন্ত রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলেন, ‘প্রদীপ যখন নিশ্চিত হলো যে মরে যায়নি তখন বাম পাশের পাঁজোরে পর পর বুট জুতা দিয়ে লাথি দিয়েছে, যাতে করে তিনটা হাড় ভেঙে গেছে।’

আর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, ঘটনাটি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ। তাই ন্যায়বিচার না পেলে উচ্চ আদালত আপিলে যাবেন তারা।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাব আশা করছি। আশানুরূপ আমরা আপিল করব। আসামি প্রদীপের পক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘সিনহা হত্যাকাণ্ডে ওসি প্রদীপ জড়িত ছিলেন না। মামলার এভিডেন্স সেটি বলে।’

টেকনাফ থানার ওসি থাকাকালে প্রদীপের রোষানলে নির্যাতিত শত শত পরিবারের চাওয়া একটাই-প্রদীপ ও তার সহযোগীদের যেন ফাঁসি হয়। শুধু তাই নয়, রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের পর থেকেই বিশেষ প্রার্থনা ও রোজা রেখে ওই দোয়াই করছে টেকনাফের অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবার।

তবে, মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের কামনা-প্রধান দুই আসামি প্রদীপ কুমার-লিয়াকতের সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক। বাকি আসামিদের সাজা হোক যার যার অপরাধের ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করেন মামলার বাদি।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ছয় দিন পর ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করার পর আদালত তদন্তভার দেয় র‌্যাবকে।

র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দেন। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।

সর্বশেষ গত ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় দু’পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। মামলার ১৫ আসামি মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন ও এপিবিএনের ৩ জন। আর অপর ৩ জন পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দা। মাত্র ২৯ কর্মদিবসে আলোচিত হত্যা মামলাটির বিচারকার্য সম্পন্ন করেছে আদালত।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রাষ্ট্র ও বাদিপক্ষ, সর্বোচ্চ শাস্তি চায়, সিনহা হত্যার রায় কাল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন