স্বপ্নের মাতামুহুরী সেতুর উদ্বোধন

fec-image

পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার চকরিয়ায় খরস্রোতা মাতামুহুরী নদীতে নির্মিত বহুল কাঙ্খিত ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু। বহু প্রত্যাশিত এ স্বপ্নের মাতামুহুরী সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধন হলো। এতে খুলছে উন্নয়নের দ্বার। ৩৫৫ দশমিক ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বপ্নের সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩২১ দশমিক ৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৩১ দশমিক ২০ মিটার। মাতামুহুরী সেতুর সুবাদে উন্মোচিত হলো নতুন সম্ভাবনার দ্বার, এতে যানজটমুক্ত হবে চকরিয়া পৌরশহর। দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে এই সেতু যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে, এমনটি মনে করছে কক্সবাজারবাসী।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ সড়ক ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাতামুহুরী সেতু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন সফলতা ও প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বের কথা উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। সেতুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী।

এ উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা, সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা মুন্সি ও রাহাত আলমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাতামুহুরী সেতুর ছয় লেনের মূল নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের বন্যার পর। তিন লেনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের শুরুতে যানবাহন চলাচলের জন্য প্রাথমিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। তিন লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরুর পর ভেঙে ফেলা হয় পুরনো দুই লেনের জরাজীর্ণ সেতুটি। ওই স্থানে শুরু করা হয় বাকি তিন লেনের নির্মাণকাজ।

জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহযোগিতায় ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (বাংলাদেশ)’ আওতায় নির্মিত ১৬টি সেতুর মধ্যে অন্যতম মাতামুহুরী সেতু। যেটি চিরিঙ্গার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত।

মাতামুহুরী সেতুর পূর্ব প্রান্তে মহাসড়কের জিদ্দাবাজার পর্যন্ত (কাকারা রাস্তার মাথা) এবং পশ্চিম প্রান্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় পর্যন্ত অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটির দুই প্রান্তের নিচে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তা বলেন, ছয় লেনের সেতুগুলোর মধ্যে মাঝখানের চার লেনে চলাচল করবে দূরপাল্লার ও দ্রুতগতির যানবাহন। বাকি দুই লেন দিয়ে চলবে ধীরগতির তথা স্থানীয় যানবাহন। এছাড়া এই দুই লেনে (উভয় পাশে) ফুটপাত হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক মিটার করে উন্মুক্ত থাকবে। তিনি জানান, মাতামুহুরী সেতুর পূর্ব প্রান্তে মহাসড়কের জিদ্দাবাজার পর্যন্ত (কাকারা রাস্তার মাথা) এবং পশ্চিম প্রান্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় পর্যন্ত অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফীন বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ছয় লেনের এই সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে করে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। চকরিয়া পৌর শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গায় দূরপাল্লার যানবাহনের চাপ কমে এসেছে।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, মাতামুহুরী সেতুর কারণে চকরিয়া শহরের ওপর দিয়ে দূরপাল্লার যান নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। এখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের পূর্ণতা পেল। জেলার সবচেয়ে দীর্ঘ ও বড় মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মাতামুহুরী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন