হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখির বাসা

fec-image

হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখির বাসা। আগে সচরাচর নজরে পড়লেও এখন তেমন চোখে পড়েনা বাবুই পাখি। তবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে হারিয়ে যাওয়া বাবুই পাখির বিচরণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বাবুই পাখি সম্পর্কে জানা যায়, বাবুই দৃষ্টিনন্দন পাখি। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর। কয়েক প্রজাতির বাবুই একাধিক কক্ষবিশিষ্ট বাসা তৈরি করতে পারে। বাবুই পাখিকে শৈল্পিক ইঞ্জিনিয়ার বলা চলে। নিজের ঘর সাজাতে তাদের কোনো জুড়ি নেই। এরা বেশ দলবদ্ধ প্রাণী আর কলোনি করে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। বেশিরভাগ বাবুই প্রজাতির পুরুষ সদস্য বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়। কিছু প্রজাতি তাদের প্রজনন মৌসুমে বর্ণের ভিন্নতা প্রদর্শন করে। বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই দেখা যায়। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই।

বাবুই পাখির বাসা উল্টানো দেখতে কলসির মতো। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ ছাড়ায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গাও তৈরি করা হয়। অন্য দিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ থাকে। কথিত আছে- বাবুই পাখি চালাকও কম নয়। রাতে বাসায় আলো জ্বালাতে জোনাকি পোকা ধরে এনে বাসায় গুঁজে রাখে।

বাবুই পাখি যত্ন করে তালপাতা, কাশবনের পাতা, খড়কুটো দিয়েই উঁচু তালগাছে, নারিকেল, কড়ই, খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। বাসা যখন উঁচু তাল গাছে দোল খায়, তখন দারুণ লাগে। তাদের শৈল্পিক চিন্তা এতই প্রবল ঝড় কিংবা তুফানেও কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারে না। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।

গ্রীষ্মকাল এদের প্রজনন মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস। তারা সাধারণত কাঁটাজাতীয় বৃক্ষে বাসা তৈরি করে এবং আহার সংগ্রহে সুবিধা পায়। কালোবুক বাবুই নলখাগড়ার বন ও লম্বা ঘাসবনের বাসিন্দা। মূলত সিলেট, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে দেখা মেলে। এরা লম্বায় ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১৮-২২ গ্রাম। পুরুষ ও স্ত্রীর দেহের রঙে বেশ পার্থক্য আছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষের দেহে রঙের যথেষ্ট পরিবর্তন হয়। পুরুষের মাথার চাঁদি সোনালি-হলুদ হয়ে যায়। কান-ঢাকনি ও গাল হালকা বাদামি থেকে সাদা। ঘাড় ধূসর-কালো ও গলা সাদা। বুকে চওড়া কালো ফিতা। পেট ফিকে সাদা, যাতে হালকা বাদামি বা হলদের ছোঁয়া। পিঠে কালচে লম্বালম্বি দাগ। প্রজননকালের স্ত্রী অন্য সময়ে চেয়ে কিছুটা উজ্জ্বল, অনেকটা শীতের পুরুষের মতো।

স্ত্রী ও প্রজননহীন পুরুষ মাথা ও ঘাড়ের ওপর কালচে ডোরা, যার মাঝখানে হলুদ। দেহের ওপরটায় লম্বালম্বি হলুদ ও কালচে দাগ। ভ্রু ও গলা হলুদ, কান-ঢাকনি বাদামি ও পেট পীতাভ। বুকের উপরের কালো ফিতা অসম্পূর্ণ। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে চোখ হালকা বাদামি, ঠোঁট কালচে। পা, আঙুল ও নখ হালকা গোলাপি। মে থেকে সেপ্টেম্বর প্রজননকালে নদীর তীরে বা জলার ধারে নলখাগড়া বা উঁচু ঘাসে ২০-২৫ সেন্টিমিটার লম্বা কিছুটা ডিম্বাকার বাসা বানায়, যা বাবুই পাখির বাসার তুলনায়। একই জায়গায় সচরাচর দুই থেকে পাঁচটি বাসার কলোনি দেখা যায়। পুরুষ পাখি বাসা বানায়, অর্ধসমাপ্ত বাসা স্ত্রী পরখ করে। পছন্দ হলে জোড় বাঁধে। স্ত্রী দুই থেকে চারটি সাদা ডিম পাড়ে। প্রায় দুই সপ্তাহে ডিম ফোটে। বাচ্চারা এক মাসের মধ্যে উড়তে শেখে।

এক সময় গাঁও-গ্রামে বুনন শিল্পী পাখি ও বাসার সন্ধানে পাখিপ্রেমীরা ছবি তুলতে, কিচির-মিচির শব্দ শোনার জন্য আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতেন। এখন আর তেমন একটা বাবুই পাখি চোখে পড়ে না। পড়ে না নয়নাভিরাম বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। গাঁও-গ্রামের আকাঁবাঁকা মেঠোপথে, পতিত উঁচু ভিটেমাটিতে, কখনও কখনও বাড়ির সীমানায় শোভাবর্ধন তাল গাছে বাবুই পাখির বাসা শোভা পেত। তা দেখে মানুষ মুগ্ধ হতো। এখন সেই তালগাছও প্রায় বিপন্ন হতে চলছে।

এব্যাপারে দীঘিনালা উপজেলা পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাকির হোসেন, বাবুই পাখি বিরল প্রকৃতির। গাঁও-গ্রামে তাল গাছ, নারিকেল গাছ, খেজুর গাছ ও কড়ই গাছে তারা দল বেঁধে বাসা বাঁধে। এই বাবুই পাখি পরিবেশ বিপর্যয় ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা দায়িত্ব সবার।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন