নদী দখলদারদের উচ্ছেদ ও নদীর তালিকা নিশ্চিত করার দাবিতে

২৩ দিন হেঁটে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ মহেশখালীর রাকিব

fec-image

রাকিব জানায়, সে একাকী পদযাত্রায় বিচলিত নয়। বরং সে দেশের নদীর দখল ও নদীর বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে বিচলিত।

নদী দখলদারদের উচ্ছেদ ও দেশে নদীর প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করে তালিকা প্রনয়ণের দাবি নিয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে হেঁটে পৌঁছেছেন এক তরুণ।

শুক্রবার (১২ মে) বিকালে তিনি টেকনাফ শাহ পরীরদ্বীপে পৌঁছান।

এই তরুণ হলেন মহেশখালীর শাপলাপুরের ষাইটমারা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে রাকিব হাসান (২৪)। তিনি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র।

রাকিব হাসান, তিনি গত ২০ এপ্রিল সকালে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করেন। আজ বিকেলে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছে ২৩ দিন। পাড়ি দিয়েছেন ১০১০ কিলোমিটার পথ।

যাত্রাপথে রাকিব হাসান ১৫টি জেলা পার হয়েছেন। এগুলো হলো পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার।

আজ বিকেলে শাহপরীর দ্বীপে গিয়ে দেখা যায়, রাকিব হাসানের গায়ে ছিল টি-শার্ট এবং হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

টি-শার্টে বড় করে লেখা, পদযাত্রা- তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ:

১.নদী দখলদারদের উচ্ছেদ কর, নদীর প্রবাহ নিশ্চিত কর।
২. নদীর সংখ্যা যাচাই করে তালিকা প্রনয়ণ কর।
৩. নদী রক্ষায় বিশেষ আইন প্রনয়ন কর।

এ সময় রাকিব হাসান জানায়, ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত হাঁটতেন তিনি। রাতে যেখানে হাঁটা বন্ধ হয়ে যেত, ওই এলাকায় পরিচিত কারও বাসায় পরিচিত না থাকলে হোটেলে, মসজিদে, পেট্রোল পাম্প এর রেস্ট হাউজে রাতযাপন করতেন।

দূরত্ব ভীতির কারনে কেউ সঙ্গী না হওয়ায় একাকী সে পদযাত্রা শুরু করেন বলে জানায় তিনি। রাকিব হাসান আরও জানায়, এটাই তার প্রথম দীর্ঘ একাকী পদযাত্রা। রাকিব জানায়, সে একাকী পদযাত্রায় বিচলিত নয়। বরং সে দেশের নদীর দখল ও নদীর বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে বিচলিত।

সে আরও জানায়, নদী আমাদের দেশের রক্তনালীর মত। দেশে প্রবাহমান সমস্ত নদী এখন শুকিয়ে গেছে। আগামী দশকের মধ্যে অনেক নদী হয়তো মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে। যদি এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নদী রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে দেশের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। এতে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিপর্যয় নেমে আসবে। যা তাকে উদ্ধিগ্ন করেছে। তাই সে সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েই পদযাত্রার পথ বেছে নিয়েছে।

নদী রক্ষার দাবিতে পথ পাড়ি দেওয়া এই তরুণ মনে করেন, নদী রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করা দরকার বলে মনে করেন এই তরুণ। তিনি বলেন, ‘আসুন সবাই নদী রক্ষায় সচেতন হই। আর এই উদ্দেশ্যেই আমার এই পদযাত্রা।’

পদযাত্রার সীমাবদ্ধতার প্রশ্নে রাকিব হাসান জানায়, প্রথম কয়েকদিন হাটার পর পা ব্যথা ও ফুলে গেলেও কিন্তু পরে তা ঠিক হয়ে যায়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, নদী, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে রাকিবের একক আন্দোলন ও প্রতিবাদ অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যে বার্তা দিচ্ছেন এতে নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবেন। তার এই কাজে সবার সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে নদী রক্ষায় দেশবাসীকে সচেতন করেছে সে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদী, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে তাঁর এ পদযাত্রা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ২৪ বছরের এ যুবক একজন শিক্ষার্থী। তাঁর দেশপ্রেম, অদম্য সাহস ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন স্মরণে রাখবে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, নদী রক্ষা আন্দোলনে দেশে রাকিব দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাস যোগ্য পৃথিবী গড়ার হিরো হয়ে থাকবেন। তার এই মহৎ কাজে সবার সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে নদী রক্ষায় দেশবাসীকে সচেতন করেছেন তিনি। তার যাত্রা শুভ ও সফল হোক।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, তেঁতুলিয়া, দখলদার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন