সড়কের উপর মিনি পুকুর, পেকুয়াবাসীর দুঃখের শেষ নেই

পেকুয়া প্রতিনিধি:

বরইতলী-পেকুয়া-মগনামা সড়কের উপর মিনি পুকুরে রুপান্তর হয়েছে। ফলে পেকুয়াবাসীর দুঃখের শেষ নেই। পেকুয়াবাসীর বর্তমানে একটি মাত্র দুঃখ সেইটি হচ্ছে বরইতলী-পেকুয়া-মগনামা সড়কের পেকুয়া চৌমুহনী থেকে পেকুয়া কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের গোয়াখালী রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা।

এ সড়কের এমন অবস্থায় পরিণত হয়েছে যা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত হচ্ছে চকরিয়া পেকুয়া এবং পাশ্ববর্তি কুতুবদিয়া উপজেলার হাজার হাজার লোকজন। এসব উপজেলার যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে এ সড়ক। তবে চকরিয়ার সাথে যোগাযোগের আরো ২টি বিকল্প রাস্তা থাকলেও শতকরা ৮০ ভাগ যাত্রী চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে।

আর এ সড়কটি এখন মানুষের দুর্ভাগ্য দুর্দশার অপর নামে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি ভারী যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচলের কারণে সড়কটি চূর্ণ বিচুর্ণ হয়ে গেছে। বিশেষ করে মগনামায় নির্মিতব্য নৌ বাহিনীর সাব মেরিন ঘাঁটি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মানের মালামাল পরিবহন, অতিরিক্ত লবণ পরিবহন, সিমেন্ট পরিবহন, ও স্টেশনগুলোতে পানি নিস্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ও সরোপুরি এক যুগ ধরে এ সড়কটির সংস্কার না করায় এ করণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায় ওই সড়কের প্রায় শতাধিক পয়েন্টে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। তার উপর বৃষ্টির পানি জমে ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে এ সড়কটি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সড়ক ও জনপদ বিভাগের উদাসীনতার কারণে এ সড়কে জন দূর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে সড়ক বিভাগ জানিয়েছেন সড়কটির উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ সড়কের উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।

বর্ষার কারণে সড়ক উন্নয়নের কাজে হাত দিতে দেরী হচ্ছে। বর্ষার কাজ শুরু করলে জনগণের দুঃখ দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পাবে। জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার সদর থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ২৫ কি.মি. এ সড়কটি পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়নের লোকজন যাতায়াত করার জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। এ সড়কে দু উপজেলার দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকে। গত এক যুগ ধরে এ সড়কের সংস্কার কাজে হাত দেয়নি কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন যাতায়াতকারীরা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন লোকজন সড়কটি চকরিয়া পেকুয়া সড়ক বা বানিয়ারছড়া মগনামা সড়ক হিসেবে চিনলেও সেটি একতা বাজার মগনামা সড়ক হিসেবে পরিচিত। সড়কটির নাম্বার হচ্ছে জেড ১১২৫। একতা বাজার থেকে মগনামা পর্যন্ত যার দৈঘ্য ১৯.০৭ কি.মি.। তাকেও আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তন্মধ্যে একতা বাজার থেকে পেকুয়া চৌমুহনী কলেজ গেইট পর্যন্ত ১১.৩ কিমি প্রথম পর্যায়ে আর চৌমুহনী থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ৭.৭ কিমি ২য় পর্যায়ে।

অফিস সূত্রে জানায়, সড়কটির বেহাল দশা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ অবগত আছে এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও পাওয় গেছে। বর্ষা শেষে সড়কটির উন্নয়নের কাজে হাত দেয়া হবে বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চকরিয়া সড়ক জনপদ বিভাগের সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবু আহসান মো. আজিজুল মোস্তাফা জানান, একতা বাজার চৌমহুনী পর্যন্ত ১২ কিমি সড়কটি মাতারবাড়ি কয়লা বিদুৎ প্রকল্পের অধীনে দিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকী চৌমহুনী থেকে মগনামা পর্যন্ত ৭.৭ কিমি রাস্তা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেওই সড়কটির কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

সড়কটির এরকম নাজুক অবস্থা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ের সড়কগুলো সাধারণত ১০ টনের বেশি ধারণ ক্ষমতা থাকেনা। সেখানে পেকুয়া সড়কে প্রতিনিয়তই ৫০ টনের অধিক গাড়ি চলাচল অব্যাহত থাকে তাহলে কোন অবস্থাতেই রাস্তা টেকসই হবে না।

এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার সড়ক ও  জনপদ বিভাগের নিবাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয়া বড়ুয়া জানান, চৌমুহনী থেকে মগনামা পর্যন্ত ৭.৩ কিমি সড়ক উন্নয়নের জন্য ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে এ প্রকল্পের অধিনে ২০ কিলোমিটার দৈঘ্য কুতুবদিয়া আজম সড়কটির উন্নয়ন করা হবে। প্রথম বছর এ টাকা খরচ করার পর ২য় পর্যায়ে আরো বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, এ সংস্কার কাজের আওতায় পেকুয়া বাজার অংশে পানির সঠিক নিস্কাশনের জন্য ২টি কালভার্ট নির্মাণ, বাজার অংশে ৫০০ মিটার আরসিসি ঢালাই, বাজারের দুই সাইটে রাস্তা প্রশস্ত করা স্টেশনের পানি নিস্কাশনের জন্য ইউ ড্রেইন সিস্টেম বাদ দিয়ে সশার ড্রেন করে দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবুল করিমের সাথে কথা হলে তিনি জানিয়েছেন এ ব্যাপারে সড়ক বিভাগকে অবগত করা হয়েছে। তারা বর্ষার পর পরই কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন