দূর্গমতাকে জয় করে ‘সোসং’ ও ‘সোনালী’ ঝর্ণায় আত্মহারা পর্যটক
পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময়ী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। কৃত্রিম হ্রদের উপর ঝুলন্ত সেতু, গয়াল প্রজনন খামার আর চা বাগান কেন্দ্রিক এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন এলাকা। সম্প্রতি অনাবিষ্কৃত এবং লোকচক্ষুর আড়াল থেকে দুটি ঝর্ণা আবিষ্কৃত হয়েছে। এরমধ্যে ‘জারুলিয়াছড়ি সোসং’ ঝর্ণাটি গত পাঁচ বছর আগে আবিষ্কৃত হলেও ‘চাকঢালা সোনালী’ ঝর্ণাটি গত দুই সপ্তাহ আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্যটকদের নজরে আসে। দুটি ঝর্ণা দেখলে সৌন্দর্য পিপাসুরা মুগ্ধ হবেন নিশ্চিত। ঈদের পর থেকে ‘সোসং’ ও ‘সোনালী’ ঝর্ণায় প্রতিদিন স্থানীয় ও আশপাশের পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় জমেছে।
সরেজমিনে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি ও চাকঢালা ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়কের পর যাতায়াতের জন্য সুগম কোন ব্যবস্থা নেই। উঁচু-নিচু পাহাড়, গিরি পথ আবার কোথাও ছড়া। এসব দুর্গমতাকে ভেদ করে পায়ে হেঁটে ঝর্ণায় আনন্দ আর উচ্ছাসে মেতে উঠেছে শত শত পর্যটক। উঁচু পাথরের ভাজ আর দূর্গমতাকেও যেন ভ্রমণ পিপাসুদের মনে ভয় কাবু করতে পারেনি।
সোসং ঝর্ণা: সোসং মারমা ভাষা। এর অর্থ নীরব বা শান্ত প্রকৃতির। প্রথম ভ্রমনে যাওয়া স্থানীয় পর্যটকরাই এই ঝর্ণার নামকরণ করেছে সোসং ঝর্ণা। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি এই ঝর্ণার দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। সোসাং ছাড়াও এখানে আরো একটি ছোট ঝর্ণা রয়েছে সেটির নাম ‘কোয়াসং’। এর উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। এই দুটি ঝর্ণার উচু খাড়া পাহাড় থেকে পানি শো শো শব্দ করে নিচের দিকে পতিত হচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির গাছপালা আর জঙ্গলে ঝর্ণার চারপাশ আচ্ছাদিত হয়ে আছে। সেগুলো যেন সবুজের সমারোহ। সেই সাথে পাখির কিচির-মিচির বনের নিস্তব্ধতাকে জাগিয়ে রাখে সারাক্ষণ।
সোনালী ঝর্ণা: চাকঢালা বাঘমারা ঝিরি নতুনপাড়ার স্থানীয় এক ব্যক্তির নামানুসারে ঝর্ণাটির নামকরণ করা হয়েছে সোনালী ঝর্ণা। গত দুই সপ্তাহ আগে এই ঝর্ণাটি পর্যটকদের নজরে আসে। এরপর থেকে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে যাচ্ছেন ঝর্ণায়।
কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে ঝর্ণা জারুলিয়াছড়ি ঝর্ণায় প্রথম দেখতে গিয়েছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি ছালেহ আহমদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক মানস মহাজন মিলু।
তিনি পার্বত্যনিউজকে জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের সৌন্দর্্যর পাশাপাশি ঝর্ণা দুটি তাদের মুগ্ধ করেছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও ঝর্ণাটি রক্ষনাবেক্ষণ করা গেলে পর্যটক আগমন আরও বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম রাসেল বলেন, নিজ এলাকায় সোসং ঝর্ণা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পাহাড়ি এলাকায় এই ঝর্ণা মানুষের খোরাক আর মানসিক প্রশান্তি দিবে নিসন্দেহে। ব্যবসায়ী ফখরুল আজাদ মুরশেদ বলেন- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে ঝর্ণাগুলো প্রাণ ফিরে পাবে।
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এ্যানিং মারমা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে এটি পর্যটনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হবে। গয়াল ফার্ম বা জারুলিয়াছড়ি হয়ে সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা হবে প্রথম কাজ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পার্বত্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
যেভাবে যাবেন: বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে পৌছার পর অটো বা রিক্সা যোগে গয়াল ফার্ম (গয়াল প্রজনন খামার) যেতে হবে। এর পর ৩কি.মি পায়ে হেঁটে গন্তব্য স্থল জারুলিয়াছড়ি চাকমাঘোনা এলাকায় ‘সোসং’ ও ‘কোয়াসং’ ঝর্ণা।
এছাড়া সোনালী ঝর্ণায় যেতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে যেতে হবে চাকঢালা বাজারে। এরপর স্থানীয় যেকারো সহযোগিতা নিয়ে আধা ঘন্টা পায়ে হেটে যেতে হবে নতুনপাড়া এলাকায় সোনালী র্ঝণায়।