খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা
দুলাল হোসেন,খাগড়াছড়ি॥
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যাবস্থার এখন বেহাল অবস্থা। ডাক্তার সংকট, আসন সংকট, ঔষধ সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ভাল ব্যাবহারের অভাব, প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় হতাশ পাহাড়ের দরিদ্র জন সাধারন।
১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে রূপান্তরিত হওয়ার পরের বছরেই পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় ৫০ বেডের এই হাসপাতাল। তখন এ’জেলার লোকসংখ্যা ছিল প্রায় তিন লাখ। তারপর অতিক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ৩০ বছর, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে লোক-সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় তিনগুন।
ইতিমধ্যে, পাহাড়ের অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে শতভাগ চিকিৎসাসেবা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের বিগত ২০০৭ সালে নির্মান করা হয় তিন তলা বিশিষ্ট ১০০ বেডের আধুনিক হাসপাতাল । কিন্তু ভবন নির্মানের সাত বছর পরে ও জনবলের অভাবে চালু না হওয়ায় চিকিৎসাসহ অন্যান্য সকল স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দু’জেলার ১১ উপজেলার প্রায় দশ লক্ষাধিক বাসিন্দা।
জনবল অবকাঠামো কাগজে কলমে থাকলেও নেই বাস্তবে। প্রতিদিন অনেক রোগী বাড়ি ফিরে যায় চিকিৎসা ছাড়া, অনেকে চিকিৎসা নেন হাসপাতালের বারান্দায় থেকে। কেউ কেউ হাসপাতালের বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজেন আবার কেউ-কেউ রোদ্রেও পোড়েন। কিন্তু এত কষ্টের পরেও পাননা কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা । নিয়মিত দেখা মেলে না ডাক্তারদের। অভিযোগ রযেছে বেশীরভাগ ডাক্তার ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট ক্লিনিক নিয়ে। হাসপাতালে ১৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৮ জন। ডাক্তার সংকটের পাশাপাশি সংকট রয়েছে ২য়, ৩য়, ৪র্থ শ্রেণীর জনবলেরও । খাগড়াছড়ি জেলার আট উপজেলা এবং রাংগামাটি জেলার তিন উপজেলার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সবার অভিযোগ ন্যুনতম স্বাস্থ্যসেবা নেই এই হাসপাতালে।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বললে তারা প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তারেরা নিয়মিত রোগীদের দেখেন না। অনেক সময় দু’দিন পর একবার আসেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
জেলার মাটিরাংগা উপজেলার তবলছড়ি এলাকার কিশোর ত্রিপুরা( ৪০) বলেন, হাসপাতালে টয়লেট এবং ওয়াশরুম একেবারে ব্যাবহারের অনুপযোগী। ময়লা এবং দুর্গন্ধে সেখানে টেকাই দায়। অনেক সময় পানি ছাড়াই রোগীরা টয়লেট করে সব নোংরা করে রাখে। পরিষ্কার করার উদ্যেগও নেয়না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাছিনা বেগম(৩৮) নামের আরেক রোগী অভিযোগ করেন, তিনি পর পর তিনদিন এসেছেন আলট্রাসানোগ্রাফী করানোর জন্য কিন্তু প্রতিদিন ফেরত গেছেন ডাক্তার না থাকার ফলে।
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের রত্না চাকমা(৩৫) নামের এক রোগী বলেন, নার্সরা সবসময় দুর্ব্যাবহার করেন। তারা অনেক সময় হাসপাতালে রোগীর বারান্দায় থাকার বেড, বালিশ এমনকি মশারি দিতে ও অর্থ দাবি করেন।
জেলা শহরের শালবন এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক বলেন গরীব মানুষের কথা শুনলে ডাক্তার, নার্স কেউ সেবা দিতে চায় না। বেশীর ভাগ সময় বকাঝকা দেয়ার অভিযোগও করেছেন তিনি। আর যদি একবার ডাক্তার দেখেবা তাহলেও সরকারী ঔষধ দেয়না। বাইরের ফার্মেসী থেকে কিনতে হয়।
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ সন্জীব ত্রিপুরা বিভিন্ন সংকটের কারনে রোগীরা প্রত্যাশিত সেবা না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কর্তব্যরত ডাক্তারদের অথবা নার্সদের চিকিৎসা প্রদানে অবহেলার কথা অস্বীকার করেন। সকল কর্মকর্তা –কর্মচারী প্রানপণ কষ্ট করে নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও নিরলস পরিশ্রম করেন বলে তিনি দাবি করেন। বিদ্যুত সংকটের কারনে অনেক সময় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়না এবং যার ফলে টয়লেট এবং ওয়াশরুম নোংরা থাকে বলে তিনি স্বীকার করেন।
ঔষধ সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার প্রদত্ত সব ঔসধ গরীব রোগীদের দেয়া হচ্ছে। ডাঃ সন্জীব আরো বলেন, কোন ঔষধ রেখে দেয়ার জন্য নয়।
সিভিল সার্জন ড: নারায়ন চন্দ্র দাশ চিকিৎসা সেবা ঠিকমত হচ্ছেনা স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটই প্রধান কারণ। পাহাড়ের এগার উপজেলার হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে ১০০ বেডের একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মান করেছে। সব অনুমোদন আছে শুধু জনবল না থাকায় চালু করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মোঃ রফিকুল আলম বলেন, রোগীদের সবচেয়ে বেশী কষ্ট হয় আবাসন সংকটের কারনে। তিনি ১০০-বেডের নব নির্মিত হাসপাতালটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দিয়ে চালুর দাবী জানান।