চকরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় গ্রামীণ সড়কের ৪২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতি হয়েছে। ভয়াবহ বন্যার পানিতে তলিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অভ্যান্তরীণ গ্রামীণ সড়ক উপসড়ক ভেঙ্গে বড় বড় খানাখন্দকে সৃষ্টি হয়েছে।
এতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর যাতায়াতে বাড়ছে চরম দুর্ভোগ। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও বানের পানিতে ভাসছে উপকূলীয় জনপদের ৫টি ইউনিয়ন। যে সমস্ত ইউনিয়নে এখনো বানের পানি বন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করেছে সে সব ইউনিয়ন গুলি হচ্ছে বদরখালী, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা।
এ সব ইউনিয়নে হাজার হাজার পরিবার আঞ্চলিক মহাসড়কে তাবু টাঙ্গিয়ে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে। বানের পানি কমার সাথে সাথে বন্যা দুর্গত জনপদে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এ বারের সৃষ্ট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ছোট কালভার্টসহ অসংখ্য অভ্যান্তরীণ সড়ক ও উপসড়ক। উপরিভাগ থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে নানা ক্ষতচিহ্ন।
বিশেষ করে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ একেবারে ভেঙে পড়েছে। কোথাও পিচঢালা সড়ক, আবার কোথাও ইটের সড়কের বিশাল অংশজুড়ে বড় বড় ক্ষতের সৃষ্টি হওয়ায় বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের চলাচলে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের। রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ১০দিন ধরে একেবারে বন্ধ রয়েছে অন্তত ৮-১০টি ইউনিয়নে।
সম্প্রতি সড়ক জনপদ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি)অভ্যান্তরীণ সড়ক ও উপসড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসমুহ জরিপ করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরুপন করেছে। এতে দুই দপ্তরের প্রায় সাড়ে ৪২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানাগেছে।
সওজ ও এলজিইডি’র অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানিতে এলজিইডি ও সওজের আওতাধীন অধিকাংশ গ্রামীন সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় বিশাল গর্ত হয়েছে। আর এতে দুটি দপ্তরের ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে এলজিইডির সড়কের ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি টাকার এবং সওজের ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকার।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী রণি সাহা বলেন,সম্প্রতি বন্যার কারণে অভ্যান্তরীণ সড়কে কোথাও পিচঢালা সড়ক, আবার কোথাও ইটের সড়কের বিশাল অংশজুড়ে বড় বড় ক্ষতের সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বানের পানি নেমে যাওয়ার পরে ক্ষতস্থান নিরুপণ করা হয়।এলজিইডি দপ্তরের আওতাধীন সড়কের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।ক’দিনের মধ্যে এ ক্ষতি নিরুপণ করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ বন্যার ফলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার এবং চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫০ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ আসলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কগুলো মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।
চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে বিভিন্ন দপ্তরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামীণ সড়কগুলো মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। যাতে করে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের দুঃখ লাঘব হই।