নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত কাগজিখোলা আদর্শ ইসলামী দাখিল মাদরাসা
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের অবহেলিত গ্রাম কাগজিখোলা। দূর্গম এই এলাকায় ১৯৮৬সনে দ্বিনী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কাগজিখোলা আদর্শ ইসলামী দাখিল মাদরাসা। আর্থিকভাবে অসচ্ছল এ এলাকার মানুষ এখন সেই প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণান্তর চেষ্টা করছে। শিক্ষক ও শিক্ষীর্থীদের অভিযোগ শ্রেণী কক্ষ ও অর্থ সংকটের কারণে বর্তমানে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমা রেখা আলাদা করেছে ছোট একটি খাল। এপারের কাগজিখোলায় ৩৫ বছর আগে এক একর জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কাগজিখোলা আদর্শ ইসলামী দাখিল মাদরাসা। বাইশারী ইউনিয়নের সাপেরঘাড়া, ক্যথোয়াইপাড়া, কাগজিখোলা, কালাপাড়া, লাইল্লাপাড়া, ক্যাংগারবিল, রাঙ্গাঝিরিসহ আশপাশের অসংখ্য গ্রামের ছেলে-মেয়ের শিক্ষালাভের একমাত্র মাধ্যম এ মাদরাসা। বর্তমানে এখানে এবতেদায়ী, নূরানী, হেফজখানা থেকে শুরু করে দাখিল পর্যন্ত লেখাপড়া করছে প্রায় সাড়ে তিনশো শিক্ষার্থী। মাদরাসায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন বলতে ২০০৬সনে তিন কক্ষের একটি সেমিপাকা ভবন দিয়েছিল পার্বত্য জেলা পরিষদ। সে থেকে উন্নয়নের আর ছোঁয়া লাগেনি। পর্যাপ্ত শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠদান করেন ভাঙ্গাচোড়া মাটির ঘরে।
সরেজমিনে মাদরাসার ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া তাফরিন, সাইফুল ইসলামসহ একাধিক শিক্ষার্থী পার্বত্যনিউজকে জানান- পর্যাপ্ত ক্লাস রুম ও বেঞ্চ-টেবিল না থাকায় ঘেঁষাঘেষি করে বসতে হয় তাদের। বর্ষা মৌসুমে ছাউনী দিয়ে পানি পড়ে ক্লাসরুমে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো তারাও নিজ প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর অবকাঠামো দেখতে চান।
এদিকে মাদরাসার সহকারী শিক্ষক জিয়াউল হক আনচারী বলেন- নামেমাত্র বেতনে দ্বিনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনাকালীন সময় থেকে বেতনভাতা বা কোন ধরনের প্রনোদনা পাননি। যার কারণে মানবেতর দিন যাপন করেছেন তার মতো অন্যান্য শিক্ষকরাও।
স্থানীয় বাসিন্দা ও এডভোকেট মুহাম্মদ ইব্রাহিম ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক বাধা উপেক্ষা করে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি আলোরমুখ দেখেছে। আশানুরূপ ফলাফল পেলেও ভবন, আসবাবপত্র ও অর্থ সংকটে পড়েছে এই মাদরাসাটি। ১৫জন শিক্ষক ও সাড়ে তিনশো শিক্ষার্থীর জন্য টিন সেড পাকা ভবন রয়েছে মাত্র দুটি। একটিতে শিক্ষকরা অফিস কক্ষ ও অন্যটিতে ক্লাস নেওয়া হয়।
মাদরাসা সুপার মুহাম্মদ রিদুয়ানুল হক জানান- প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দূর্গম এলাকায় আলো ছড়াচ্ছে এই মাদরাসা। জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীরা কষ্টের মধ্যে পাঠদান করে। প্রতিষ্ঠান এবং সাড়ে তিনশো শিক্ষার্থীসহ ১৫ জন শিক্ষককে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মাদরাসা পরিচালক এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইব্রাহিম মুজাহিদ বলেন, ১৯৮৬সনে প্রতিষ্ঠার পর দুই দফায় মাদরাসাটি বন্ধ হয়েছিল। পরবর্তী নানা চড়াই উতরায় ২০০৯ সনে পুনরায় চালু হয়। বর্তমানে কাগজিখোলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মাদরাসায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। দূর্গম এলাকায় শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে মাদরাসাটি টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা চান তিনি।