আদিবাসী শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা: ৫০ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

fec-image

বিশ্ব আদিবাসী দিবসে টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করতে সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমগুলোকে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে ক্ষোভ জানিয়েছেন দেশের ৫০ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলেছেন, এ ধরনের নির্দেশনা বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পরিপন্থী।

আজ শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা ওই সার্কুলারকে ‘আমলাতান্ত্রিক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

আদিবাসী দিবস উপলক্ষে টক-শো’তে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করতে ১৯ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমগুলোকে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টক শোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্য ব্যক্তিদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য অনুরোধ করা হয়।

বিশিষ্টজনেরা এই নির্দেশনার ব্যাপারে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘যে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় এই সার্কুলার প্রচার করেছে, সেই সরকারের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ২৮(ক) ধারায় একাধিকবার আদিবাসী শব্দটি স্পষ্ট করে ব্যবহার করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের দেশের সংবিধানে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে সংবিধানের কোনো ধারা বা বিষয় নিয়ে কোনো বিতর্ক বা মতান্তর দেখা দিলে তার ব্যাখ্যা একমাত্র সুপ্রিম কোর্টই দিতে পারবে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নয়। আর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টেরই এক রায়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা নেই।’

আজ দেওয়া বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, ‘সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ২(ক) ও ২(খ) ধারায় যে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া রয়েছে, তাতেও এই সার্কুলারে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। একজন কী কী শব্দ চয়ন করলেন, তাতে রাষ্ট্রের কারও কিছু বলার নাই, যদি এই শব্দ ব্যবহারে অন্য কারও প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা না ছাড়ানো হয়।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন হামিদা হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুলতানা কামাল, বদিউল আলম মজুমদার, শিরীন হক, অধ্যাপক পারভীন হাসান, খুশী কবির, ইফতেখারুজ্জামান, মোস্তাফিজুর রহমান, ফেরদৌস আজীম, আবুল বারকাত, রানা দাশগুপ্ত, মেঘনা গুহঠাকুরতা, আহরার আহমেদ, জেড আই খান পান্না, শারমিন মুর্শিদ, রেহনুমা আহমেদ, শহিদুল আলম, শাহীন আনাম, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গীতি আরা নাসরিন, সুমাইয়া খায়ের, তবারক হোসাইন, সারা হোসেন, শামসুল হুদা, কাজল দেবনাথ, রোবায়েত ফেরদৌস, শাহনাজ হুদা, সুব্রত চৌধুরী, সঞ্জীব দ্রং, সামিনা লুৎফা, মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, জাকির হোসেন, তাসনিম সিরাজ মাহবুব, বীনা ডি’ কস্টা, মো. নুর খান, রানী ইয়েন ইয়েন, জোবাইদা নাসরীন, নোভা আহমেদ, রেজাউল করিম চৌধুরী, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, নীনা গোস্বামী, দীপায়ন খীসা, মাহরুখ মহিউদ্দিন, পল্লব চাকমা, রেজাউল করিম লেনিন, সায়দিয়া গুলরুখ, হানা শামস আহমেদ ও অরূপ রাহী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আদিবাসী, বিশ্ব আদিবাসী দিবস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন