কটেজ জোনের কিং কাজী রাসেল আটক

fec-image

কক্সবাজার শহরের কলাতলী পর্যটন জোনের মূর্তিমান আতঙ্ক কাজী রাসেল আহমেদ নোবেল (৩৩)কে এক নারীসহ ইয়াবা সেবন করা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়।

দীর্ঘদিনের আলোচিত-সমালোচিত কাজী রাসেলকে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে অভিযান চালিয়ে আসমাউল হুসনা মিম (২৭) নামে ঢাকার দোহারের এক নারীসহ গ্রেফতার করা হয়।

কলাতলীর লাইট হাউজ এলাকার মৃত কাজী তোফায়েল আহমদের ছেলে কাজী রাসেল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য এবং কলাতলী কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি। গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কাজী রাসেল ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

সঙ্গে গ্রেফতার আসমাউল হুসনা মিম (২৭) ঢাকার দোহারের জয়পাড়ার মৃত আবদুল মজিদের মেয়ে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কাজী রাসেলের অপরাধের রাজ্য বিস্তৃত। তার বড় ভাই পৌর কাউন্সিলর মোরশেদ আহমদ বাবুর তিন শ্যালক মাসুদ, খালেদ ও মাহফুজ এবং স্থানীয় যুবক ওয়াজেদ ও মান্নানসহ ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ গড়ে তোলা হয়েছে।

তারা ঢাকার বাড়ি, শারমিন, সবুজ, আমির ড্রিম, সি-টাউন, কমফোর্টসহ কয়েকটি কটেজে যৌনকর্মী, ইয়াবা এবং বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করেন।

কলাতলী সড়কের পূর্বপাশের প্রতিটি গেস্ট হাউজ এবং ফ্ল্যাট থেকে রাসেলের হয়ে চাঁদা তোলেন মান্নান। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলেন রাসেল। সে হিসাবে মাসে তার চাঁদার টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকা।

স্থানীয়রা জানায়, পর্যটন এলাকায় নির্মাণাধীন অনেক ব্যক্তির অ্যাপার্টমেন্ট, ভবন, হোটেলের কক্ষ ও ফ্ল্যাট দখল করে ভাড়া দেন রাসেল ও তার সহযোগিরা।

কলাতলী সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারি ফ্ল্যাট দখল করে ঘের ও ঘর তুলে ভাড়া দেন রাসেল। ঢাকার ফরিদ খান ইরান নামের এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় রাসেলের।

বিভিন্ন সময় দেখা করার সুযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুক, ব্যানার-ফেস্টুন ছাপিয়ে রাসেল প্রচার করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ভাগনে বলে ডাকেন। এভাবে পর্যটন জোনে অপরাধ জগতের ‘কিং’ হয়ে উঠেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, অপরাধী কোনো দলের হতে পারে না। দলীয় পরিচয়ে অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে।

কাজী রাসেলের দায় দল নেবে না। তার বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ছবি তুলে মন্ত্রীর ভাগনে পরিচয় দেন কিং রাসেল। সেই সঙ্গে পর্যটন এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।

গ্রেফতারের পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে জোর তদবির চালান তার ভাই কক্সবাজার পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মোরশেদ আহমদ বাবুসহ তার সহযোগিরা।

কাজী রাসেল গ্রেফতার এবং অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে জানতে তার ভাই কাউন্সিলর কাজী মোর্শেদ আহমদ বাবুকে কল দিলেও রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দেয়া হলেও সাড়া দেননি তিনি।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) মাসুম খান বলেন, কক্সবাজার পর্যটন এলাকার কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পরিচয়ে কাজী রাসেল নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যেত।

সম্প্রতি মোরশেদ নামের এক যুবককে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন রাসেল। ওই ঘটনায় তাকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কলাতলীর সৈকত এলাকার নির্মাণাধীন ওই বাসা দখলের জন্য কাজী রাসেল তার সহযোগিদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় রাসেল ও ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তদবিরের মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতাকে ছেড়ে দেয়া হয়। লুকিয়ে ফেলা হয় উদ্ধার হওয়া অস্ত্র।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, কাজী রাসেলকে নারীসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় অস্ত্র কিংবা অন্য কিছু উদ্ধারের কথা জানাননি সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মো. শাহাজান কবির।

এর পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কাজী রাসেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আটক, ইয়াবা, কক্সবাজার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন