বন্যপ্রাণী পাচার-জীববৈচিত্র সংরক্ষণ গবেষণায় ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন ড. নাছির উদ্দিন

fec-image

বন্যপ্রাণী পাচার এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণের উপর গবেষণা করে চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্স থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন কক্সবাজারের কৃতি সন্তান ড. নাছির উদ্দিন। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বন্যপ্রাণী পাচার প্রতিরোধ টিমের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে- গত ২৮ নভেম্বর জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ, হংকং এবং চায়নার সাতজন প্রফেসরের সমন্বয়ে গঠিত পিএইচডি থিসিস পর্যালোচনা কমিটি ড. নাছির উদ্দিনের গবেষণা থিসিস পর্যালোচনা, মৌখিক পরিক্ষা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত রিসার্চ পেপার পর্যালোচনা করে সর্ব সম্মতিক্রমে ড. নাছির উদ্দিনকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করেন।

ড. নাছির উদ্দিন বাংলাদেশ থেকে কীভাবে বন্যপ্রাণী বিদেশে পাচার হচ্ছে এবং বিদেশ থেকে কিভাবে বন্যপ্রাণী বাংলাদেশে আসছে, বিভিন্ন দেশীয় বাজারে কিভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হয়, অনলাইন মিডিয়া ব্যবহার করে কীভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হয় তার উপরে গবেষণা করেছেন। একই সাথে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইন প্রয়োগের দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উপায় বের করেন। তিনি তার গবেষণায় বন্যপ্রাণী অবৈধ বেচাকেনার মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এবং দেশের মধ্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক ব্যাধি কীভাবে বন্যপ্রাণী থেকে মানুষে ছড়িয়ে যেতে পারে তা ফুটিয়ে তুলেছেন। ড. নাছির উদ্দিনের গবেষণার প্রধান সুপারভাইজার ছিলেন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এলিস সি. হিউজ।

ড. নাছির উদ্দিন রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর মাদ্রাজ ভেটেরিনারি কলেজ এবং নামাক্কল ভেটেরিনারি কলেজ থেকে প্রাণী চিকিৎসার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। থাইল্যান্ড থেকে বন্যপ্রাণী অবশকরন ও চিকিৎসার উপর বিশেষ গবেষণা সম্পন্ন করেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিআইএস এবং রিমোট সেন্সিং এর উপরে বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন এবং নেদারল্যান্ডের ভিরাজ ইউনিভার্সিটি থেকে পরিবেশ অপরাধ বিজ্ঞানের উপরে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স সম্পন্ন করেন।

গবেষণার পাশাপাশি ডক্টর নাছির উদ্দিন ওইয়াল্ড টীম, মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন, আইসিডিডিআরবি এবং প্যন্থেরা নামক আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক অর্গানাইজেশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। এর পাশাপাশি ড. নাছির উদ্দিন সোসাইটি ফর কনজারভেশন বায়োলজির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আইইউসিএন এর এশিয়ান হাতি বিশেষজ্ঞ টিমের একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একই সাথে রেঞ্জার্স ফেডারেশন এশিয়া এর একজন নির্বাহি সদস্যও। একই সাথে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটির একজন বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন।

ড. নাছির উদ্দিনের প্রায় ১৬ টি বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাপত্র বিভিন্ন স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ড. নাছির উদ্দিন রাষ্ট্রীয় ও বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ কাজে যোগদানের জন্য ইতিমধ্যে ৩০ টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন।

ড. নাছির উদ্দিন পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি এবং রাজনীতিবিদ মরহুম মালেকুজ্জামানের কনিষ্ঠ সন্তান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম গোলাম কাদেরের ছোট ভাই। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বন্যপ্রাণী পাচার প্রতিরোধ টিমের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এইদিকে ড. নাছির উদ্দিনের পিএইচডি অর্জন উপলক্ষে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞানী, শিক্ষক, পেশাজীবি, উন্নয়ন কর্মি রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শুভানুধ্যায়িরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে রামু প্রেস ক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়–য়া, সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ সহ সদস্যবৃন্দ বন্যপ্রাণী পাচার এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণের উপর গবেষণা করে চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্স থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করায় ড. নাছির উদ্দিনকে অভিননন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গবেষণা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন