আপডেইট

বান্দরবানে প্রতিপক্ষের গুলিতে জেএসএস সংস্কারের সভাপতিসহ নিহত ৬ আহত ৩

বান্দরবানের বাঘমারা এলাকায় জেএসএস(মূল) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রতিপক্ষ জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের সভাপতিসহ  ৬ জন নিহত ৩ আহত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সকালে বান্দরবান বাঘমারায় আনুমানিক ৭টার দিকে জেএসএস মূলের সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে লারমা গ্রুপের সন্ত্রাসীদের উপর হামলা করলে তারা নির্মমভাবে নিহত হন। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ৩ জন।

নিহতরা হ‌লেন, জেএসএস সংস্কার এর জেলা সভাপ‌তি রতন তঞ্চঙ্গ্যা(৬০), সহসভাপ‌তি প্র‌জিত চাকমা(৬৫), সদস্য ডে‌বিট মার্মা (৫০), মিলন চাকমা (৬০), জয় ত্রিপুরা(৪০) ও দি‌পেন ত্রিপুরা(৪২)।

আহত ৩ জন হলেন, নিহারু চাকমা (৪২), বিদ‍্যুৎ চাকমা (৩৩), হ্লাওয়া চিং মার্মা (২৫)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান জেলা জেএসএস সংস্কারের সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গা সকালে ঘুম থেকে উঠে তার বাসার সামনে চেয়ারে বসা ছিলো। এবং এ সময় তার সহযোগীরা সকালের টুকটাক কার্যক্রমে আশেপাশেই ব্যস্ত ছিলো।

এ সময় ৫/৬ জনের জেএসএস মূলের সন্ত্রাসীদল থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও কমব্যাট টি শার্ট পরিহিত অবস্থায় এসে অতর্কিতে তাদের উপর ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। এতে কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাস্থলে রতন তঞ্চঙ্গা ও তার সহযোগীরা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা জেএসএস মূল দলের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য জানার জন্য তাদের একাধিক নেতার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যর একটি দল পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে সেনা টহলও চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ এলাকাকে ঘিরে রাখা হয়েছে।

মূলত ২ সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা শুনতে পেয়েছি।

স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্রের দাবী, নিহতরা জেএসএসের রাজনীতির সাথে এক সময় জড়িত থাকলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চাঁদাবাজীর মাধ্যমে আয় কমে যাওয়া এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মুখে অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকি ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছিল।

সাম্প্রতিককালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস (মূল) দল নানাবিধ সংকটের মধ্যে সময় পার করছে। এরইমধ্যে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকে চাঁদাবাজি করতে ব্যর্থ হয়ে দলটি অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়। ফলশ্রুতিতে, অভাব অনটনের কারণে দলের সদস্যদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে বিগত কয়েক মাসের মধ্যে বেশ কিছু সদস্য জেএসএস (মূল) দল ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করে।

জেএসএস (মূল) দল তাঁদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সংগঠন থেকে বের হয়ে যাওয়া অথবা সংগঠন থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ কারীদের বিরুদ্ধে সচরাচর নৃশংস ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

গত এক সপ্তাহের মধ্যে বান্দরবানে একের পর এক অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এক থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১ জুলাই বান্দরবানের রুমায় মাদক ব্যবসার অভিযোগ এনে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। মারা যাওয়া দু’জন হলেন, ক্যাসুইথোয়াই মার্মা (৩২) ও থোয়াইবাঅং মার্মা (৩৮)।  ১ জুলাই ঘটনাটি ঘটে জেলার রুমা উপজেলার দুর্গম রেমাক্রী প‍্রাংসা ইউনিয়নের সাংক্রাইতং পাড়ায়।

এ ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২ জুলাই বান্দরবানে এক আওয়ামী লীগ নেতা সদর উপজেলা ৫নং ওয়ার্ড ৩৩৬নং বালাঘাটা মৌজা হেডদ্রম পাড়ার লালমুন হল বমের ছেলে রুয়াল লুল থাং বমকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, অপহরণের পর তাকে গভীর জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তারা আরও জানান, বেশ কিছুদিন যাবত তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ত্যাগ করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল সন্ত্রাসীরা। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

রোয়াল লু থাং বম আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে সহযোগিতা করে থাকতো। এছাড়া তিনি ইতোপূর্বে পিসিপির রাজনীতি ত্যাগ করে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় ওয়ার্ডে রাজনীতি শুরু করেন। এই কারণে জেএসএস এর সন্ত্রাসীরা তাকে অপহরণ করেছে ।

এদিকে গত ৫ জুলাই বান্দরবানে চাঁদা আদায় করতে এসে পাহাড়ি সন্ত্রাসী বাহিনী এমএন লারমা গ্রুপের ২ সদস্য হাতেনাতে প্রশাসনের হাতে আটক হয়।

৫ জুলাই সকাল ১১ টার দিকে বান্দরবান সদরস্থ কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে মোটর সাইকেল যোগে ২জন দাবীকৃত উক্ত টাকা নিতে আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  চাঁদা রশিদ ও নগদ ১৫ হাজার টাকা‘সহ আটক করে।

আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বান্দরবান কালাকাটা ত্রিপুরা পাড়ার গুণধর ত্রিপুরার ছেলে অসীম ত্রিপুরা(২২), আরেকজন বান্দরবান মধ্যমপাড়ার, স্থায়ী ঠিকানা কেয়াচুঁ পাড়া থানচির চয়হ্লা প্রু মারমার ছেলে অং থোয়াই চিং মারমা (৩২)।

এদিকে ২ জুলাই আওয়ামী লীগ নেতা লুলু থাং বম অপহরণের ৪ দিন পর ৬ জুলাই আরো এক আওয়ামী লীগ নেতাকে অপহরণ করা হয়।

অপহরণকৃত ব্যক্তি বান্দরবান ২ নং সদর কুহালং ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ১ নং রাবার বাগান এলাকার মৃত অর্ণজয় ত্রিপুরার ছেলে গুংগা জলি ত্রিপুরা ( ৪১) তিনি রাবার বাগান ৩নম্বর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা।

এই বিষয়ে অপহরণকারীর বড় ভাই জগদীশ ত্রিপুরার (৫৮ ) সাথে কথা সরাসরি কথা বললে তিনি জানান, আমার ছোট ভাই ৫ তারিখ রবিবার সকাল ৯ টা বাজে আমার বাসায় মৌসুমী আম নিয়ে আসে। সেখান থেকে সে আম দিয়ে ৯.৩০ মিনিটে আমার বাসা থেকে তার নিজের বাসা রাবার বাগান এলাকায় ফেরত যাওয়ার মধ্যপথে আর বাসায় ফিরে যায়নি, আমার ছোট ভাইয়ের সাথে সকাল ১১:১৫ মিনিট পর্যন্ত মোবাইল ফোন যোগে শেষ আলাপ হলেও এরপর থেকে কোনো খোঁজখবর পাচ্ছি না ।

তাই আমরা আশেপাশে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত সম্ভাব্য সকলের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করার পর ছোট ভাইকে না পাওয়ায় আজ ৬ জুলাই সোমবার দুপুরে বান্দরবান সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি । যার সাধারণ ডায়েরি নাম্বার ১৮১।

এ দিকে সম্প্রীতির বান্দরবান খ্যাত জেলায় হঠাৎ করেই পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধি ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জেলাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত, জেএসএস সন্ত্রাসী, বন্দুকযুদ্ধ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন