পাহাড়ে তোলপাড়

যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক পদে বাঙালি

fec-image

সদস্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় যুবদলে কমিটিতে উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক পদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পাহাড়ে তোলপাড় চলছে। তীব্র প্রতিক্রিয়া চলছে উপজাতি সম্প্রদায় ছাড়াও সচেতন রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক পদে একজন বাঙালিকে দেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে উপজাতিসম্প্রদায়ের মধ্যে। এছাড়া ঘোষিত কমিটিতে খাগড়াছড়ির কাউকে অর্ন্তভুক্ত না করায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এমন দৈন্যদশা নিয়ে বিএনপির বাঙালি নেতারাও প্রশ্ন তুলেছে। প্রয়াত বিএনপির প্রতিষ্ঠতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতিকে দ্বিধা-বিভক্ত না করতে সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাদ দিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ করেছেন। আর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, পিছিয়ে পরা উপজাতি জনগণকে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার মানসে মূলদল তথা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহে উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করেছেন। যার কারণে পাহাড়ের হাজার হাজার উপজাতীয় সম্প্রদায় এখন বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।

অথচ যুবদলের কমিটি ঘোষণার সময় উপজাতি বিষয়ক সম্পদক পদ দেওয়ার জন্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। যুবদলের কমিটিতে খাগড়াছড়ি জেলার কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করায় নিন্দার ঝড় বইছে। উপজাতিদের বিশ্বাসযোগ্য নিরাপদ স্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এর জন্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ইতিপূর্বেও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের কমিটিতে একজন বড়ুয়া সম্প্রদায়ের নেতাকে উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক পদে বসানো হয়েছিল।

জানা গেছে, চলতি মাসের ২২ ফেব্রুয়ারি ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিমিতে উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক করা হয় আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে। আর প্রতিবাদ ও আলোচনা-সমালোচনার সূত্র সেখান থেকে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কমিটির ঘোষণার পর পাহাড়ে বিএনপির রাজনীতি সাথে জড়িত উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। পাশাপাশি বাঙালি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। তারই ধারাবাহিকতায় খোদ খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অনিমেষ চাকমা রিংকু তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক টাইম লাইনে পোস্ট করেন- “যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নবনির্বাচিত সকলকে অভিনন্দন। তবে আমার প্রশ্ন আছে….
১. আমার জানামতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, পিছিয়ে পরা উপজাতীয় জনগণকে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার মানসে মূলদল তথা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহে উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করেছেন। যুবদলের মতো একটা সুনামধন্য সংগঠনে উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক পদে উপজাতি নয় এমন ব্যক্তিকে কেন নিয়োগ দেয়া হলো? তিন পার্বত্য জেলায় হাজার হাজার উপজাতীয় জনগণ এখন জাতীয়তাবাদী আদর্শ লালন করে।
২. ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে খাগড়াছড়ির কাউকে সদস্য পদ পর্যন্ত দেয়া হয়নি কেন? আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, কয়েকটি শক্তিশালী জেলার পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলা যুবদল অনেক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। দীর্ঘ ১৬ বছরের ইতিহাসে খাগড়াছড়ি জেলা যুবদল প্রতিটি কর্মসূচি সাহসিকতার সহিত পালন করেছে। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ লেখাটি আমার প্রিয় সংগঠনের আভ্যন্তরিণ বিষয়ে লিখলাম। ভিন্নমতাবলম্বী অনেক বন্ধু বাজে মন্ত্য থেকে বিরত থাকবেন আশা রাখছি।

কানন বড়ুয়া বিশাল লিখেছেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক এবং সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকে ডাক্তারের বাইরে তো কাউকে নেয়া হয়নি। তাহলে, উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদকে এমন কেন? বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ছেলেরা কি অপরাধ করলো?

অজয় সেন ত্রিপুরা লিখেছেন, এদেশে একপক্ষ আইন করে আরেক পক্ষ তা বাস্তবায়ন করে। আসলে উপজাতিদের বিশ্বাসযোগ্য নিরাপদ স্থান কোথায়? উপজাতিদের জাতীয় রাজনীতিতে মূল্যায়ন করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপজাতিদের জন্য উপজাতি বিষয়ক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু তার কোন সঠিক বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। সদ্য নবগঠিত যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দেখলাম উপজাতি বিষয়ক সম্পাদকের পদে আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এর নাম। আসলে এসবের মানে কি? তাহলে কি এদেশে বাঙালিরাই উপজাতি? দৃষ্টি আকর্ষণ,মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জান্নাতুল নওরিন লিখেছেন, “উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক” এই পদটার নাম হওয়া উচিত ছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিষয়ক সম্পাদক। দলের সিনিয়রদের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে পরবর্তী সময় সংশোধনী আশা করছি।

মাহাবুব খালেদ লিখেছেন, সর্ব প্রথমে যুবদলের সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটিকে রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। উক্ত কমিটিতে উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক যে পদটি দেওয়া হয়েছে তা একজন উপজাতিকে দেওয়াটা কি গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা? যদি উপজাতি ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়া লাগত, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক না দিয়ে পার্বত্য বিষয়ক সম্পাদক দেওয়া টা যৌক্তিক বলে মনে করি।

এ কে সাহা নয়ন লিখেছেন, আজীবন দেখে আসছি প্রত্যেক কমিটিতে উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক পদটি পাহাড়ি অঞ্চলের কাউকে দেয়া হতো। কিন্তু জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয়সংসদে দেখা গেল এই পদটি বাঙালি একজনকে দেয়া হইছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে খাগড়াছড়ি জেলা যুবদলের নেতা বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে এক দিনে জেলা যুবদলের ১২ হাজার নেতাকর্মী আসামি হয়েছে। বিগত ১৬ বছরে খাগড়াছড়ির অন্তত ২৫ হাজার নেতাকর্মী আসামি হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী বাড়ি-ঘর ছাড়া হয়েছে। অনেকে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছে। অথচ ঘোষিত কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটিতে খাগড়াছড়ির কারো স্থান হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন একজন উপজাতীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের। বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন একজন উপজাতীয় সম্প্রদায়ের। এছাড়া বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদকও উপজাতি। বর্তমানে বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতিও উপজাড়ীয় সম্প্রদায়ের। এছাড়াও খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং আন্দোলন সংগ্রামেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজাতি, বাঙালি, যুবদল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন