রামুতে ইউপি চেয়ারম্যানের হামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২০ নেতাকর্মী আহত
কক্সবাজারের রামুতে আন্দোলনরত জনসাধারণের উপর রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলমের অনুসারীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনায় রশিদনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব, বাজার পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতিসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মূমুর্ষূ অবস্থায় ৮ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় উপজেলার রশিদনগর মামুন মিয়ার বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সহাসড়ক অবরোধ করলে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বিকালে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে গেলে ক্ষুব্ধ জনতা পরিষদে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ ঘটনায় জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলমকে অবিলম্বে অপসারণসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে আশ্বাস দিলে উত্তেজিত জনতা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।
হামলায় আহত রশিদনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন ও বাজার পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি জামায়াত নেতা মৌলানা শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নারী কেলেঙ্কারি, ভোট ডাকাতি, পাহাড় ও বন নিধন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানি, নির্যাতনের অভিযোগে চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলমের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে রবিবার সকালে রশিদনগর বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ইউনিয়নের সর্বস্তুরের জনসাধারণ। ওই সমাবেশে অংশ নেয়া বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম। এরই জেরে সোমবার সকাল ১১টার দিকে অস্ত্র, লাটি-সোটা নিয়ে এমডি শাহ আলমের দুই শতাধিক ভাড়াটে লোকজন পরিকল্পিতভাবে বাজারে অবস্থান করা বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায়।
তারা আরও জানান, হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এরমধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৮ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহতরা হলেন- রশিদনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন (৪২), ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব দিদারুল আলম (৩৫), বাজার পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি জামায়াত নেতা মৌলানা শফিকুর রহমান (৪৫), বিএনপি নেতা ছাবের আহমদ (৫০), জাফর আলম (৪৫), জানে আলম (৬০) ও তানজিল এনাম (৩৫)। আহত অন্যান্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী আরিফ উদ্দিন জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলমের নেতৃত্বে ডাকাত রমজান, চেয়ারম্যানের ভাই লাল মিয়া, ভাগিনা জানে আলম, ফয়সাল, জাহাঙ্গীর আলম নুনু, আবুইয়া, ডাকাত কাশেম, ডাকাত আয়ুব আলী, আবদুল্লাহ, আবু বক্কর ডাকাত, সাদ্দাম হোসেন, সিরাজ ডাকাত, আলম, হারুন, কালা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সাদ্দাম, ফারুকসহ দুই শতাধিক ভাড়াটে লোকজন এ হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা পিকআপ যোগে এবং আশপাশে পাহাড়ি এলাকা থেকে আকস্মিকভাবে বাজারে এসে এ হামলায় অংশ নেয়। হামলাকারীরা রশিদনগর মামুন মিয়ার বাজারে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। হামলা চলাকালে পুরো বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনার পর থেকে পুরো ইউনিয়নে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এদিকে এ হামলায় আহত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেতাকর্মীদের দেখতে যান রামু উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোক্তার আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর বাবু। তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি স্বৈরাচারের দোসর চেয়ারম্যান শাহ আলমের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা। সোমবার সকালে রশিদনগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাজারের নিজস্ব ওয়ালটন শোরুমে বসে দলীয় নেতাদের সাথে বৈঠক করার সময় শাহ আলমের চেয়ারম্যানের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও তাকে মারধর করে। পরে বাজারের আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে বিএনপির ২০ জন নেতাকর্মীকে মারধর করেছে। এদের অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। বিএনপি পরিবার এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা জানাচ্ছে এবং এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম এবং হামলায় অভিযুক্ত রশিদনগর ইউপি চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলমের মুঠোফোনে সোমবার রাতে কল করা হয়। কিন্তু তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি। এ কারণে তাঁদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানিয়েছেন, হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।