লামায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি জবর দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
বান্দরবানের লামা উপজেলায় জমি জবর দখল চেষ্টার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের লোকজন। মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ির গ্রামের বাসিন্দা মো. গিয়াস উদ্দিন ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন মামুনের বিরুদ্ধে এ সংবাদ সম্মেলন করেন দুর্গম পাহাড়ি রাজা ও গতিরাম পাড়ার লোকজন।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গতিরাম পাড়ার বাসিন্দা হরি চন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে চব্দ্র মনি ত্রিপুরা। এ সময় ভুক্তভোগী হরি চন্দ্র ত্রিপুরা, ক্যচিং মুরুং, বলি চন্দ্র ত্রিপুরা সহ পাড়া কারবারি কিষ্টরাং ত্রিপুরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বৃদ্ধ হরি চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, কেউ আমার ভোগদখলীয় জমি জবর দখল করলে আমি আত্মহত্যা করবো। কারণ এ জমি ছাড়া আমার আর কোন জমি নেই। এ জমিই আমার পরিবারের সদস্যদের উপার্জনের একমাত্র উৎস।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৪ সালে হরি চন্দ্র ত্রিপুরা হেডম্যান রিপোর্ট মূলে দুই একর প্রথম শ্রেণি ও তিন একর দ্বিতীয় শ্রেণির জমি আবাদ করে তথায় খামার ঘরসহ বিভিন্ন ফলজ বনজ গাছের বাগান সৃজন করে ভোগ করে আসছেন। একইভাবে পাশের ক্যাচিং মুরুংও ১১২নং হোর্ল্ডি মূলে তিন একর তৃতীয় ও দুই একর দ্বিতীয় শ্রেণির জমি আবাদ করে বসতঘর ও বিভিন্ন ফলজ বনজ বাগান সৃজন করে ভোগ করছেন। পাশে বগাইছড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তির নামে ২৫ একর রাবার প্লট রয়েছে। কিন্তু আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর ওয়ারিশ গিয়াস উদ্দিন ও মোহাম্মদ হোসাইন মামুন রাবার প্লটের কাগজ দেখিয়ে হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং মুরুং এর বহু কষ্টে অর্জিত জমিগুলো জবর দখল করার চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিপক্ষরা জমি জবর দখলে নিতে ২০১৭ সালে অতর্কিতভাবে ৯-১০ জন শ্রমিক লাগিয়ে হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং ম্রো জমির ৩০০ কলা গাছসহ বিভিন্ন গাছের চারা কেটে দেন। এ ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও ভুক্তভোগীরা কোন সুরাহা পায়নি।
একপর্যায়ে গত মে মাসে স্থানীয় হেডম্যান, কারবারি, ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি মিমাংসা হয়। কিন্তু মিমাংসিত বিষয়টিকে উপেক্ষা করে কিছুদিন যেতে না যেতেই শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে গত ২৪ জুন ইউপি সদস্য হোসাইন মামুনের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলাতে ক্যাচিং মুরুং, থাংবুই মুরুং, বলি চন্দ্র ত্রিপুরা, হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও তার ছেলে এনজিও কর্মী চন্দ্র মনি ত্রিপুরাকে বিবাদী করা হয়।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন ও ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন মামুন বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাঙ্গু মৌজার ৭২৭ নং দাগের রাবার হোল্ডিং নং ৮ মূলে আমাদের বাবা আবদুর রাজ্জাকের নামে ২৫ একর রাবার প্লট রয়েছে। কয়েক বছর আগে বাবা আবদুর রাজ্জাক মারা যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং মুরুং সহ অন্যরা বিভিন্ন সময় রাবার প্লটে ঢুকে গাছের চারা রোপণ করে প্রায় ১০ একর জমি জবর দখলে নেন। তারা আরও বলেন, জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে গত মে মাসে স্থানীয় হেডম্যান, ইউপি মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রতিপক্ষরা পুনরায় রাবার প্লটে ঢুকে জঙ্গল পরিষ্কার করে গাছ লাগানোর চেষ্টা করেন। এ কারণে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করি, যেন হরি চন্দ্র ত্রিপুরারা রাবার প্লটে যেতে না পারে। তাছাড়া আমরা কারো জামি দখল করিনি বা দখলের চেষ্টাও করছি না।