অপরাধীদের বিচার চায় জেএসএস

ডেস্ক রিপোর্ট:

সোমবার (১৮ মার্চ) ৫ম উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বাঘাইছড়ির নয় মাইল এলাকায় ব্রাশ ফায়ার করে ৮ জন নিরীহ নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হত্যা ও অনেককে আহত করার ঘটনায এবং মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকালে বিলাইছড়ি উপজেলায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ বিচারের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্তু গ্রুপ।

বুধবার (২০ মার্চ) জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের  তথ্য ও প্রচার বিভাগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিনয় কুমার ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, জেএসএস কোনভাবে উক্ত হামলা ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়। উপরন্তু সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ বিচারের দাবি জানিয়ে জেএসএস উক্ত ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানায়। একই সাথে এধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তৎউদ্দেশ্যে এবং পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানায় সংগঠনটি।

বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলা হয়, সম্প্রতি বাঘাইছড়ি এবং বিলাইছড়িতে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মহল জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মনগড়া, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও প্রতিহিংসামূলকভাবে জেএসএসকে জড়িত করার ঘটনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়ার পূর্বেই জেএসএসকে দায়ী করে বক্তব্য প্রদান কোনভাবে যুক্তি ও বাস্তবসম্মত হতে পারে না বলেও দাবি করা হয়েছে। তাদের দাবি, এ ধরনের বক্তব্য প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে সুষ্ঠু তদন্তকে যেমনি বাধাগ্রস্ত করবে, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে বলে জনসংহতি সমিতি মনে করে।

উল্লেখ্য, সোমবার ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় ৫ম উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার কংলাক মাচালং ও বাঘাইহাট ভোট কেন্দ্র থেকে উপজেলায় ফেরার সময় উপজাতি সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ ভোটের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর ব্রাশ ফায়ারে ৮ জন নিহত ও অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে নিবার্চনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা অভিযোগ করে বলেছিলেন, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা নিশ্চিত পরাজয় জেনে সকালে নির্বাচন বর্জন নাটক করার পর সন্ধ্যায় সরকারি কাজে নিয়োজিতদের ওপর এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে। তিনি এই হামলার জন্য জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা) ও ইউপিডিএফকে (প্রসিত) দায়ী করে বক্তব্য দেন।

অন্যদিকে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দায়ী করে রাঙ্গামাটি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের দিকেই আঙ্গুল তোলা হয়েছে। কারণ একই উপজেলায় এর আগেও জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের হাতে হতাহতের শিকার হওয়ায় সেখানে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গণ পত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে।

এবারের উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে এ দুটি হত্যাকাণ্ডের দায়ী হিসেবে স্থানীয় অন্যান্য সংগঠন এবং সংস্থার সন্দেহের তীরও জেএসএস (সন্তু) এবং ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের দিকে হওয়ায় গণমাধ্যমে সেটাই প্রতিফলিত হয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ঘটনার দু’দিন পর জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের পক্ষ থেকে নিজেদের দায় অস্বীকার করে এ বিবৃতিটি এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন