‘আরাকান আর্মি’র সহযোগীকে জেল হাজতে প্রেরণ, আটক আরও ২
ফাতেমা জান্নাত মুমু:
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলা থেকে মিয়ানমারের নাগরিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সহযোগী অং ইউ ইয়াং রাখাইনকে আদালতে হাজিরের পর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। শুক্রবার বিশেষ আদলতের নিদেশে তাকে রাঙামাটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তাছাড়া এ অভিযানে আটক করা হয়েছে আরও দুই জনকে।
আটকরা হলেন- রাজস্থলী উপজেলার কলেজ পাড়া এলাকার স্থানীয়বাসীন্দা রেনা ইজু মারমার বাড়ী কর্মচারী চং সুই অং মারমা (৪২) ও অং হ্লা সাই মারমা। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে তাদের রাজস্থলী উপজেলা থেকে আটক করে সেনা সদস্যরা। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুল সরকার জানান, গত বুধবার রাতে আটক রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলায় মিয়ানমারের আরাকান আর্মির পোশাক ও সরঞ্জামসহ মিয়ানমারের নাগরিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সহযোগী অং ইউ ইয়াং রাখাইন ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে পর রাঙামাটি কেন্দ্রীয় গারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত বুহস্পতিবার পুলিশ এস আই অভিজিত বড়ুয়া বাদি হয়ে একটি মামরা দায়ের করেন। মামলা নং ২৭/০৯/২০১৫ই। তবে এ অভিযানে রাজস্থলী উপজেলার কলেজ পাড়া এলাকার স্থানীয়বাসীন্দা রেনা ইজু মারমার বাড়ীর দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে যৌথবাহিনীর একটি দল রাজস্থলীর কলেজ পাড়া এলাকার প্রভাবশালী রেনা ইজু মারমা নামে এক নেদারল্যান্ড প্রবাসীর বাড়ীতে অভিযান চালায়। এসময় বাড়ীর মালিককে আটক করা না গেলেও মিয়ানমারের নাগরিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সহযোগী অং ইউ ইয়াং রাখাইনকে আটক করে যৌথবাহিনীর দলটি। বাড়ীতে তল্লাশী চালিয়ে তিনটি আরাকান আর্মির পোশাক, পোশাক তৈরির ৩০গজ কাপড়, ৩টি ল্যাপটপ, মোডেম, ৩টি হেন্ডীক্যাম, ২টি বিদেশী ঘোড়া, মোবাইলসহ পাসপোট পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অং ইউ ইয়াং রাখাইন স্বীকার করেছেন তিনি মিয়ানমারের নাগরিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সহযোগী। তাঁর জন্মস্থন আরাকানে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার দূর্গম ও প্রত্যন্ত উপজেলা রাজস্থলীতে বিশাল মহল গড়ে তুলে রেনা ইজু মারমা। জানা গেছে, তিনি নেদারল্যান্ড প্রবাসী। বিশাল প্রাচীর ঘেরা বাড়ীতে গড়ে তুলে নিজস্ব জগৎ। বাড়িটিতে পোষা হয় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ২টি ঘোড়াও।
ঘোড়াগুলোর সাথে বান্দরবান সিমান্তবর্তী এলাকা থানচির তিন্দু এলাকায় সম্প্রতি দুই দফায় উদ্ধার করা ঘোড়াগুলোর সাথে মিল রয়েছে। এসব ঘোড়া আরাকান আর্মি বিদ্রোহীরা ব্যবহার করে বলে জানা গেছে। কিন্তু স্থানীয়রা জান্তনা পাহাড়ে এ বিশাল বাড়িতে কি হচ্ছে। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনীর দল। আটক করা হয় দু’হাতের কব্জি ছাড়া মিয়ানমারের নাগরিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সহযোগী অং ইউ ইয়াং রাখাইনকে.। সাথে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন সরঞ্জাম। তবে ওই বাড়ির মালিক রেনা ইজু মারমা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোন সহযোগী কিনা সে বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাকে আটক করা গেলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করেন রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ১১ব্যাটালিয়নের জোন কমান্ডার লেঃ কনেল আবদুল্লাহ হেল সাফি। এসময় রাজস্থলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী, রাজস্থলী উপজেলার থানা কর্মকর্তা মোঃ অহিদুল্লাহসহ উপজেলার ডিজিএফআই কর্মকর্তা, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।