আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর চান বিধবা নির্মলা

fec-image

দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে অসহায় বিধবা নির্মলা ভট্টাচার্য্যের (৫০) ও তার পরিবার। কয়েক বছর পূর্বে ঘূর্ণিঝড়ে গাছ পড়ে ঘরটির অর্ধেক ভেঙে যায়। এতে ঘরটির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হলেও হতদরিদ্র পরিবারটি পুনরায় ঘরটি আর মেরামত করতে পারেনি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় বিধবা নির্মলা ভট্টাচার্য্যের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

নির্মলার পরিবার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলাধীন ২নং রাইখালী ইউনিয়নের লেমুছড়ি পাড়ার বাসিন্দা।

সম্প্রতি নির্মলার ওই জরাজীর্ণ ঘরটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট ঝুপড়ি ভাঙাচোরা একটি মাটির ঘর। ঘরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। ঘরের চালের টিনগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের ভিতরে বেহাল দশা। দেওয়ালের মাটি আলগা হয়ে আছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘরটি ভেঙে পড়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে। কোন সুস্থ মানুষ ওই ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। কিন্তু নির্মলার পরিবারকে ঝুঁকি জেনেও থাকতে হচ্ছে। কারণ তারা নিরুপায়।

কেন ঝুঁকি নিয়ে ঘরটিতে বসবাস করছেন জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিধবা নির্মলা জানান, মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে সামান্য টাকা আয় করি। যা আয় করি তাতে সংসার খরচে সব চলে যায়। কীভাবে আর এই ঘর মেরামত করবো, বাধ্য হয়ে এই ভাঙা ঘরে ঝুঁকি নিয়েই থাকতে হচ্ছে। ঝড়, তুফান শুরু হলে ঘরটিতে আর থাকার উপায় থাকেনা। তখন কারো বাড়ির বারান্দায় তাদের আশ্রয় নিতে হয়।

তিনি জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘর পাওয়ার আশায় বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। অনেকেই আশা দিলেও আমার আর ঘর পাওয়া হয়ে ওঠেনি।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমাদের মতো কত অসহায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পায়, জমি পায় অথচ আমি এত কষ্টে জীবন যাপন করেও একটি ঘর কিংবা কোন সহযোগিতা পেলাম না। স্বামীর দেওয়া এক টুকরো জমি আর এই ভাঙাচুরা জরাজীর্ণ কুঁড়েঘর ছাড়া সম্বল বলতে আমার আর কিছু নেই।

নির্মলা ভট্টাচার্য্যের কাছে তার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রায় ৩১ বছর আগে স্বামী হরেন্দ্র ভট্টচার্য্য তাদের অকুল সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে পরপারে চলে যান। ওই সময় গর্ভে ছিল তিন মাসের কন্যা সন্তান। এরপর থেকে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন নির্মলা। এদিকে মেয়েকে বিয়ে দিয়েও মেয়েটির স্বামীর সংসারে সুখ জুটেনি। মেয়ের ঘরে দুটি ছেলে থাকলেও স্বামীর সাথে আর সংসার করতে পারেনি তার (নির্মলার) মেয়ে। বর্তমানে দুই নাতি, আর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে ওই ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করছে নির্মলা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাইখালী ইউপি চেয়ারম্যান মংক্য মারমা জানান, নির্মলা আসলেই খুবই অসহায় ভাবে জীবনযাপন করছে। বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে যার জমি ও ঘর নেই তাদের আগে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু নির্মলার কিছুটা জমি রয়েছে, তাই আগামীতে যদি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয় তবে আমি অবশ্যই নির্মলাকে একটি ঘর পাওয়ার জন্য সহযোগিতা করবো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আশ্রয়ণ প্রকল্প, রাঙ্গামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন