উখিয়ায় বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির নামে দাতা সংস্থার অর্থ অপচয়: তদন্তের দাবি এলাকাবাসীর
উখিয়া প্রতিনিধি:
রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার নামে দাতা সংস্থার অর্থ লুটপাট ও অপচয় করে যাচ্ছে বেসরকারি এনজিও সংস্থাগুলো। কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে লোক দেখানো কাজ করে এনজিও সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের পকেট ভারি করে চলছে।
খরা মৌসুমে চারা বিতরণের নামে দাতা সংস্থার পুরো টাকা মাটি করে দিয়েছে এনজিও সংস্থা ‘কোস্টাল এসোসিয়েশন ফর সোস্যাল ট্রান্সফরমেশন ট্রাস্ট’ (কোস্ট ট্রাস্ট)।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অভিমত, গেল মার্চ মাস যেখানে পানির জন্য উখিয়ার পুরো এলাকা হা হা কার করছে সেখানে বিতরণকৃত হাজার হাজার নারিকেল, আম, নীম ও রেইন ট্রি প্রজাতির চারা কিভাবে বাঁচানো যাবে তার কোন কুলকিনারা নেই। এনজিও সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট গ্রীস্ম মৌসুমে চারা বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য লাখ লাখ টাকা কেন অপচয় করলো, তা তদন্ত করার জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩১ মার্চ ডাম্পার ভর্তি করে হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারা উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন ও রাজাপালং ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে কোস্ট ট্রাস্ট এসব চারা ক্রয় করে এ কর্মসূচি হাতে নেয়।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শরীফুল ইসলাম জানান, ফলজ, ঔষধি ও বনজ গাছের চারা রোপণ উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুন-জুলাই মাস। অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে রসালো মাটিতে গাছের চারা রোপণ করা হলে সহজে বাঁচানো সম্ভব। খরা মৌসুমে অর্থাৎ মার্চ মাসে যেহেতু গ্রীষ্মকালে গাছের চারা রোপণ করলেও পানির অভাবে বাঁচানো কঠিন হয়ে উঠে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনজিও কোস্ট ট্রাস্টের এ্যাসিস্টেন্ট এগ্রিকালচার অফিসার মো. লতিফুর রহমান জানান, বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে উখিয়ার পালংখালী ও রাজাপালং ইউনিয়নে স্থানীয়দের মাঝে ৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারা বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি পরিবারকে ২টি নারিকেল, ১টি আম, ১টি দেশিয় নীম ও ১টি রয়েল ট্রি গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
উখিয়ার বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবী বলেন, গ্রীস্ম মৌসুমে যে কোন চারা রোপণ করা সঠিক সময় নয়। কারণ পানি দিতে না পারলে রোপণকৃত গাছের চারা মারা যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
এদিকে বর্ষা মৌসুম বাদ দিয়ে গ্রীষ্ম বা খরা মৌসুমে গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে কোটবাজারস্থ কোস্ট ট্রাস্ট অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করা হলে বাজেট ও ফিনেন্স অফিসার মো. আলী আব্বাস পুরো ঘটনাই অস্বীকার করে বলেন, এ ধরণের কর্মসূচিই তারা বাস্তবায়ন করেনি।
কিন্তু একই অফিসের এনজিও কোস্ট ট্রাস্টের এ্যাসিস্টেন্ট এগ্রিকালচার অফিসার মো. লতিফুর রহমানের সাথে পরবর্তীতে ফোনে আলাপ হলে চারা বিতরণের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বৃক্ষরোপন কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
প্রশ্ন উঠেছে, কোস্ট ট্রাস্ট এনজিও সংস্থা প্রথমে কেন এ কর্মসূচির কার্যক্রম গোপণ রাখার চেষ্টা করেছিল, এর কারণ কি?
সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা জানান, দু’মাস পর বর্ষাকাল শুরু হবে। বর্ষাকালেই চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। কিন্তু এনজিও সংস্থা গ্রীষ্মকালে চারা বিতরণের কর্মসূচি কেন হাতে নিয়েছে তা কারও বোধগম্য না। অনেকের অভিমত কেবল বিদেশি দাতা সংস্থার বরাদ্দকৃত অর্থ অপচয় করার জন্য ও দায়িত্বরত এনজিও কর্মকর্তার পকেট ভারী করতে অসময়ে চারা বিতরণ করছে। দায়িত্বহীন ও দায়সারাভাবে হাতে নেওয়া কর্মসূচির বিষয়টি খতিয়ে দেখার জরুরী হয়ে পড়েছে।