একটি আদেশের অপেক্ষায় পাহাড়বাসী

khagrachari-zilla-porishod

মুজিবুর রহমান ভুইয়া:

পাহাড়ের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের দিশা নিয়ে শুরু হওয়া বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান স্থানীয় সরকার পরিষদ এখন দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কোনটাই হয়নি। ‘যে লাউ, সেই কদু’। নতুন করে আবারোও সেই একই পথে হাটছে মানুষের সেই স্বপ্ন।

যেখান থেকে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের কথা সেখানে বসে এখন জনগণের টাকায় নিজেদের নিজেদের ভাগ্যেরই বদল করেন নেতারা। সময়ের ব্যবধানে স্থানীয় সরকার পরিষদ ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’-এ রূপ লাভ করেছে।

স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের টানাপোড়েনে আর সরকারের উচ্চ মহলের আন্তরিকতার অভাবে একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার মাধ্যমকে গণতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল করা গেলো না দুই যুগেরও বেশী সময়ে।

একটি বিশেষ মহলের কথিত ভোটার তালিকা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরে ১৯৮৯ সালের পর আর নির্বাচনের মুখ দেখেনি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ফলে সরকারের উপর মহল থেকে ফ্যাক্সের মাধ্যমে আসা ৫ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন পরিষদ দিয়েই চলছে সরকারের এ শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ গেল ২৩ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংশোধনীতে সেই ৫ জন থেকে বেড়ে এর সদস্য সংখ্যা করা হলো ১৫ জনে। এখন আবারও শুরু হলো একটি ফ্যাক্স বার্তা বা আদেশের অপেক্ষায় পাহাড়বাসী।

এখন থেকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নতুন মুখের পদচারণা বাড়বে। তবে এই নতুন মুখ বাড়ার সাথে জনগনের কোন সম্পৃক্ততা থাকবে না। আগে যেরকম ফ্যাক্স যোগে ৫ জনের তালিকা আসতো এবারো ঠিক ফ্যাক্সের মাধ্যমেই ১৫ জনের তালিকা আসবে জনগণের সেবক হিসেবে। আবার তারা নিয়োগও পাবেন সরকারের ও সরকারী দলের দলীয় পরিচয় ও আনুগত্যের কারণেই। আবার একইসাথে এই নিয়োগ নিয়ে পর্দার অন্তরালে চলবে বিশেষ লেনদেন- অন্য অনেক সময়ের মতো।

ফলে এবারো ব্যাহত হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির প্রত্যাশা। আবার একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদই জেঁকে বসবে পাহাড়ের নিরীহ মাুনষের ঘাড়ে। সরকার বদল হওয়ার সাথে সাথেই একটি ফ্যাক্সের মাধ্যমে আসা নেতারা হয়ে উঠেন পাহাড়ের মানুষের নিয়ন্ত্রক আর উন্নয়নের নিয়ামক শক্তি। এবারও সেই একটি ফ্যাক্সের জন্যই শুরু হয়েছে আরেকটি অপেক্ষার প্রহর।

গেল ২৩ নভেম্বর বিকেলে মহান জাতীয় সংসদে পার্বত্য জেলা পরিষদ সংশোধনী বিল পাস করা হয়েছে। এখন সেই বিল রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের পর গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। আর তারপর যেকোন দিন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ‘র ফ্যাক্সটিতে আরেকটি ফ্যাক্স বার্তা আসবে। আর সেই কাঙ্ক্ষিত ফ্যাক্স বার্তায় যাদের নাম থাকবে, তারাই পরবর্তী সময়ের জন্য পাহাড়ের মানুষের নিয়ন্ত্রক আর উন্নয়নের নিয়ামক শক্তি।

এদিকে মহান জাতীয় সংসদে পার্বত্য জেলা পরিষদের কলেবর বাড়িয়ে ৫ জন থেকে ১৫ জন সদস্য রাখার বিধান করে বিলা পাশের পর তিন পার্বত্য জেলার আওয়ামীলীগ নেতারা চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সকলের লক্ষ্য একটাই কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণের দেখা পাওয়া।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন