কক্সবাজারে ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া

P3_jal-taka
কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজার জেলায় পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জাল টাকা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বাজারে আসা নতুন নোটকে টার্গেট করেই জাল টাকা ছড়ানো হচ্ছে, একই সাথে ঈদকে সামনে রেখে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর টাকা আদান প্রদান করছে বলে অহরহ অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তথ্য সুত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় জাল টাকার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জনসাধারনের ধারণা না থাকায় জাল টাকা তৈরির কারিগররা জেলার সীমান্ত উপজেলা ও শহরের বেশিরভাগ এলাকায় সিন্ডিকেট করে বেপোরোয়া হয়ে উঠছে। অপরদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ২০০ শতাধিক হুন্ডি ব্যবসায়ী বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থেকে পুলিশের তালিকাভুক্ত কয়েকজন হুন্ডি ব্যবসায়ীকে আটকও করে। বর্তমানে টেকনাফে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের তালিকাভুক্তদের মধ্যে অনেকেই মাঠে রয়েছে, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেকনাফের মং মং সেন, হ্নীলা রংগীখালী এলাকার আমির আলীর পুত্র দেলোয়ার হোসেন, মৃত হাবিবুর রহমানের পুত্র খলিলুর রহমান কাউসার, কক্সবাজার সদরের ছনখোলা এলাকার মোস্তাক ও তার ভাই লুৎফুর, টেকনাফ জালিয়াপাড়া এলাকার মো: ইসমাইল, একই এলাকার বর্তমানে কক্সবাজার অবস্থানরত মোহাম্মদ আয়ুব, টেকনাফ উপজেলা এলাকার নুরুচ্ছমদ লালু, শাহপরীরদ্বীপের আবদুল বাসেত, টেকনাফ পল্লানপাড়ার ওমর ফারুক, পৌরসভার রফিক কমিশনার, হ্নীলার ব্যবসায়ী নির্মল বড়ুয়া, পানখালী এলাকার রফিক, উখিয়া সদরের আনোয়ার, নজির আহমদের পুত্র শাহজাহান, হিজলিয়া এলাকার আলমগীর, কড়ুইবনিয়ার হুন্ডি সিরাজসহ অনেকেই রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন নোট বাজারে আসার আগেই জাল নোট বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জাল নোট তৈরির কারিগররা ইতিপূর্বে বড় বড় নোট জাল করলেও তারা এখন ছোট গুলো জাল করছে। ছোট নোটের ব্যাপারে জনসাধারণ সতর্ক কম থাকায় এই পথ অবলম্বন করছে প্রতারক চক্র। তারা কক্সবাজার শহর ও সীমান্ত উপজেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত জাল টাকা ছড়াচ্ছে। ওয়ান ব্যাংক কক্সবাজার শাখার এক কর্মকতা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নোটের ডিজাইন বাজারে ছাড়ার আগেই প্রতারক চক্রের কাছে সে ডিজাইন চলে যায়। সম্প্রতি গেল এক মাসে তিনটি জাল নোট ধরা পড়ে। বর্তমানে ঈদের ঝামেলায় যেন জালনোট আদান প্রদান করতে না পারে সেই জন্য দুইজন অফিসার নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বর্তমানে কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার বাজার ও গরুর হাটবাজারে অহরহ জাল টাকা পাওয়া যাচ্ছে। একশ, পাঁচশত টাকার জাল নোটের পাশাপাশি বিশ থেকে পঞ্চাশ টাকার নোটও জাল পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সম্প্রতি ছাড় করা নতুন নোট গুলোর কাগজের মান খারাপ হওয়ায় আসল ও নকলের মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য। এতে লেনদেনকারী উভয়কেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে হচ্ছে।

কক্সবাজার শহরে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক, অগ্রনী, কৃষি, জনতা, সোনালী, ন্যাশনাল ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের কাছে মাঝে মধ্যে ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট ধরা পড়ছে। অপরদিকে গরুর বাজারে বেচাবিক্রির সময় ঝামেলায় জাল টাকা দিয়ে দ্রুত স্থান করারও অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজার শহরের বড় বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আসল ও নকল নোট এখন চেনা বড় দায়। প্রতিদিন তাদের বেচাকেনায় জাল নোট পাওয়া যাচ্ছে। আবার দোকানের কেনাকাটার ভিড়ে ক্রেতারা জাল নোট দিয়ে চলে যায়।
ইসলামী ব্যাংক কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল নাসের জানান, জাল টাকা সনাক্ত করা ও গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্য উপাত্ত বের করতে সার্বক্ষনিক একাধিক অফিসার সিভিল পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, জেলায় জাল টাকা ব্যবসায়ীদের ধরতে ও কুরবানির পশুরহাটে আলাদা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শহর ও বিভিন্ন বাজারে সাদাপোষাকধারী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন