কক্সবাজারে সাংবাদিকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ

fec-image

সাংবাদিকতা একটি মহান ক্যারিয়ার। তাই রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি মাথায় রেখে দায়বদ্ধতা ও মানবিকবোধ থেকে সাংবাদিকতা করার আহবান জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়নের স্বপ্নের সিঁড়িতে পৌঁছুবে কক্সবাজার জেলা। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কাজের মধ্যমে তার প্রমাণ দিতে হবে।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী ‘সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।

কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষ এই পৃথক দুইটি ভেন্যুতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)। ৩ দিনের এই প্রশিক্ষণে জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ৭০জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেছেন। ২৯ জানুয়ারি প্রশিক্ষণ শেষ হবে।

পিআইবির মহাপরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতনামা সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ আরও বলেন, গণমাধ্যমের আগে দেশের উন্নয়ন বাস্তবায়নের ভাবনা গাছ লাগানোর আগে ফল চাওয়ার মতো। উন্নয়ন ও গণমাধ্যম এ দুটি শব্দের উপস্থিতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অপরটি ভারসাম্যহীন। গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নের সাথে গণমাধ্যমের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার তথ্য অধিকার আইন করে গণমানুষের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। তাই সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

সভায় প্রধান পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর ভুল বার্তা ছড়ায়। যে কারণে সঠিত তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। তাই সাংবাদিকতায় খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ফেসবুকের সব কথা সংবাদে নিয়ে আসা যাবে না। নিশ্চিত না হয়ে কোন সংবাদ যেন প্রচার করা না হয়।

তিনি বলেন, একজন সমৃদ্ধ রিপোর্টারের জন্য রেফারেন্স রিপোর্টিং খুবই দরকার। তাই গবেষণা ও বিষয়ভিত্তিক সংবাদে গুরুত্ব দিতে হবে। অজানা ইতিহাসের সঠিক তথ্য বের করে আনতে জানা একজন সাংবাদিকের বৈশিষ্ট্য।

কক্সবাজারের প্রসঙ্গ টেনে জাফর ওয়াজেদ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত। কক্সবাজারকে একনামে চেনে সবাই। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। তবে কক্সবাজারের সাংবাদিকেরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করেছে। যা প্রকৃত অর্থে দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

সংবাদকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পিআইবি মহাপরিচালক বলেন, সাগরে প্রচুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। নির্বাচারে নিধন হচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। এসব বিষয়ে লিখতে হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে কক্সবাজারের বিষয়ে কি রকম সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে তা জানতে ইংরেজি ভাষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি মনে করেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষায় ব্যাপক গণসচেতনতা বাড়ানো দরকার। না হলে অচিরেই দ্বীপটি হারিয়ে যাবে।

কক্সবাজারের সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)এর উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান খ্যাতিমান সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ।

কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরীর সঞ্চালনায় কর্মশালায় অদূর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বেশি রিপোর্টিং এর উপরও গুরুত্ব দেন পিআইবি মহাপরিচালক।
বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নিপু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান, প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)’র প্রশিক্ষক শাহ আলম সৈকত, সহকারি প্রশিক্ষক বারেক হোসেন, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম দিনে সংবাদের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও উপাদান, সংবাদ মূল্য, সংবাদ চেতনা, সংবাদ সুচনা, সংবাদের বৈশিষ্ট্য, সংবাদ লেখার কৌশল, সংবাদ কাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, প্রেসক্লাব
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন