কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ৪ লেনে উন্নীত হচ্ছে

991-300x195

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার-চীন বা বিআইএমসি এর মধ্যে আঞ্চলিক কানেকটিভিটি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন আলোচনায় থাকা এ কানেকটিভিটি গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিজ উদ্যোগে তাদের অংশে প্রাথমিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কটি ৪ লেনে সড়কে রূপান্তরিত করা হলে শুধু কক্সবাজারের মানুষের জন্য নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। এতে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধ ও অবকাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন হবে।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক অবকাঠামো সম্প্রসারণের জরিপ কাজ প্রায় চূড়ান্ত করছে এবং কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬টি ব্রীজ, কালভার্ট পুনঃনির্মাণ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ সম্পন্নের পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত নিয়ে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ৪লাইনে উন্নতীকরণ বিষয় মতবিনিময় সভা মঙ্গলবার বিকালে উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রত্নাপালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন। হাইফাব ইন্টারন্যাশনাল এবং এসোসিয়েটস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসাল লিঃ এ সভা আয়োজন করে। সহযোগীতায় ছিলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এতে উপস্থিত ছিলেন, হাইফাব ইন্টারন্যাশনালের পূর্ণঃবাসন কনসালটেন্স হাসিনা খাতুন, আর্ন্তজাতিক পরিবেশ কনসালটেন্স মিঃ মিংউইং, হাইফাবের পরিবেশ কনসালটেন্স ফারুক আহমদ খান, সহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগন। এছাড়াও কোট বাজার বনিক কল্যান সমিতির সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরী, কোট বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, ষ্টেশনের বিভিন্ন র্মাকেটের মালিকগণ, ব্যবসায়ী, জন প্রতিনিধি, সচেতন নাগরিক।

সভায় উপস্থিত এডিবির নিযুক্ত কনসালটেন্সি ফামের্র প্রকৌশলীগণ বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজারের লিংক রোড় থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদেশী পরামর্শকের মাধ্যমে জরিপ কাজ শেষ পর্যায়ে। এডিবির অর্থায়নে সুইডেন ভিত্তিক ১টি এবং বাংলাদেশী ১টি কনসালটেন্সি ফার্ম যৌথ ভাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহা সড়ককে ৪ লেনে উন্নীত করার কারিগরী সমীক্ষা জরীপ চালাচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন “সাব রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপ্রেরটরী ফ্যাসিলিটি প্যাকেজ-২ প্রকল্পের” আওতায় এটি আঞ্চলিক কানেকটিভিটির মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে সংযুক্ত হবে। সভায় আরও জানানো হয়, সড়কের দু পার্শ্বে ক্ষতিগ্রস্থ জায়গার মালিক, দোকানের মালিকদেরকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ সহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের নিযুক্ত হাইফাব ইন্টারন্যাশনাল এবি-সুইডেন মূল পরামর্শক এবং এসোসিয়েটস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসাল লিঃ উপ-পরামর্শক হিসেবে এ সড়ক উন্নয়নের কারিগরী সমীক্ষা জরিপ চালানোর কাজ প্রায় শেষের পথে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফরমে সরেজমিন স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে পরিমাপ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

জরিপ দলের লোকজনের তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজারের লিংক রোড় থেকে টেকনাফ জিরো মাইলেজ পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কের উভয় প্রান্ত থেকে উভয় দিকে ৭০ ফুট ব্যাসার্ধ অনুযায়ী সমীক্ষা জরিপ চালানো হয়েছে। এতে টেকনাফ থেকে লিংক রোড় পর্যন্ত দীর্ঘ ৭৯ কিলোমিটার সড়কের উভয় পার্শ্বে বিদ্যমান সিংহভাগ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সমীক্ষার মধ্যে পড়েছে। তবে এসবের অধিকাংশ সরকারী অধিগ্রহণকৃত, খাস ও বনভূমির উপর অবস্থিত। সমীক্ষা দলের তথ্য মতে উক্ত প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, কক্সবাজারের লিংক রোড় থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্ন্ীত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সড়ক, কালভার্ট, ব্রীজ পুনঃনির্মাণ ও বাঁক গুলো সোজা ও প্রশস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নূরে-ই আলম বলেন, এডিবির অর্থায়নে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক উন্নয়নের জন্য জরিপ কাজ সম্পন্নের পথে। তবে মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় ভাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে এটিকে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেহেতু কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যমান সড়ক উন্নয়ন ও ৪টি বড় ব্রীজ, ১২টি ছোট মাঝারি কালভার্ট পুনঃ নির্মাণ কাজ চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় আশি ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ যথাযথ সম্পন্ন হবে বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কটি ৪ লেইনে সড়কে রূপান্তরিত করা হলে শুধু কক্সবাজারের মানুষের জন্য নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। এতে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন