কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে প্রতিমন্ত্রী দীপংকর
১৮ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন ও ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ২৯৯ নং আসন রাঙ্গামাটিতে ৬ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও পাহাড়ের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সর্মথনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ৫ জন সতন্ত্র প্রার্থী । ফলে রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার পড়েছেন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
তাই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীসহ সমর্থকদের মাঝে স্নায়ুর চাপ ও উৎকন্ঠা বাড়ছেই।
রাঙ্গামাটি আসনে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রচারে ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দীপংকর তালুকদার, হাতি প্রতীক নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (সন্তু লারমা) সমর্থিত প্রার্থী উষাতন তালুকদার, আনারস প্রতীক নিয়ে একমাত্র বাঙালি প্রার্থী এডভোকেট আবছার আলী ও বই প্রতীক নিয়ে জন সংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সমর্থিত সুধাসিন্ধু খীসা। এছাড়াও লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রুপম দেওয়ান আর ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী সচিব চাকমা উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এ দুই প্রার্থীর মাঠে তেমন কোন প্রচারই ছিল না।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দুই তালুকদারের মধ্যে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী উষাতন তালুকদারের মধ্যে। কারণ পাহাড়ের যেসব এলাকায় জন সংহতি সমিতির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেসব এলাকায় অন্য কোনো প্রার্থী ভোট পাবেন না। ইতিপূর্বেও দেখা গেছে, যেসব এলাকায় জন সংহতি সমিতির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেসব এলাকায় একচেটিয়া ভোট পড়েছে তাদের প্রতীকের পক্ষেই।
অন্যদিকে যেসব এলাকায় ইউপিডিএফ-এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেসব এলাকায় ইউপিডিএফ-এর পছন্দের প্রতীকে ভোট পড়ে। নবম সংসদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ-এর প্রার্থী ছিল না, তাই সেবার তাদের প্রভাবাধীন এলাকায় বিপুল সংখ্যক ‘না ভোট’ পড়েছিল। ফলে গত নির্বাচনে সারাদেশের মধ্যে সর্বাধিক ‘না ভোট’ পড়ার রেকর্ড হয়েছিল এই রাঙ্গামাটি আসনেই। সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আঞ্চলিক সংগঠন জন সংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফ তাদের প্রভাবাধীন এলাকার ভোটারদের অস্ত্রের মুখে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করে। একারণে দেখা যায় যে, বিশেষ বিশেষ এলাকায় বিশেষ বিশেষ প্রতীকে একচেটিয়া ভোট পড়ছে। আর এই কারণেই রাঙ্গামাটি আসনে নির্বাচন আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদারের জন্য চ্যালেঞ্জ ও প্রেসটিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দীপংকর তালুকদার পাহাড়ি হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি মূলত বাঙালিদের ভোটেই নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার দেশের বিরোধী জোট ভোট বর্জন করায় বাঙালি ভোটাররা সেই আগের মতো ভোট দিতে উৎসাহী হবেন কিনা তা নিয়ে সংসয় রয়েছে।
৬ হাজার ১শ ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২৯৯ রাঙ্গামাটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৩শ ৪৮ জন। পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬শ ৮৩ জন। নারী ভোটার ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৬শ ৬৫ জন।
রাঙ্গামাটি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জানান, রাঙ্গামাটিতে দশটি উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২০১টি। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৬টি, বাঘাইছড়ি ৩৮টি, লংগদু ২২টি, নানিয়ারচর ১৪টি, বরকল ১৭টি, জুরাছড়ি ১৩টি, কাউখালী ২০টি, কাপ্তাই ১৮টি, রাজস্থলী ১২টি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ১১টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
পুরো জেলায় ৩৩টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় হওয়ায় বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ির ১৬টি কেন্দ্রে হেলিকপ্টার যোগে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ উদ্দিন আহম্মদ জানান, রাঙ্গামাটি আসনে ২০১টি ভোট কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণের জন্য বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ফেমা, ব্রতি, জানিপপ, আসক, এএমইউকে ও স্থানীয় আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের ২শ’ ৪৫ জন পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ করার নিমিত্তে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও মাঠে থাকবে।